শনিবার ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

কুরআনের আলোকে আহলে বাইত

  |   সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   321 বার পঠিত

কুরআনের আলোকে আহলে বাইত

কালোর সঙ্গে ভালো, অন্ধকারের পরই আলো। দুঃখের সঙ্গে সুখ, কান্না শেষে রঙিন হয় মুখ। হ্যাঁ পাঠক! এটিই আল্লাহতায়ালার চিরায়ত বিধান।

পবিত্র কুরআনে যেখানেই জাহান্নামের ভয়াবহ আজাবের কথা বলা হয়েছে, সঙ্গে জান্নাতের অনাবিল সুখ-শান্তির কথাও এসেছে।

সূরা শুরার ২২ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা অপরাধীদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘হে নবি! তুমি সেদিন গোনাহগারদের ভয়ে অস্থির দেখবে। তারা যা করেছে, তার শাস্তি তাদের পেতেই হবে।’

পৃথিবীতে এমন একজন মানুষও খুঁজে পাওয়া যাবে না যার কোনো গোনাহ নেই। আমি-আপনি সবাই কমবেশি গোনাহ করেছি। তার মানে গোনাহর শাস্তি আমাদের পেতেই হবে। আল্লাহকে ভয় করে-এমন যে কারও জন্যই এটি বড় হতাশার কথা। আমরা জাহান্নামের এক মুহূর্তের শাস্তিও সহ্য করতে পারব না। তাহলে উপায়?

বান্দা যেন হতাশ না হয়ে আশায় বুক বাঁধে তাই দয়াময় প্রভু বড় দয়া করে পরের অংশেই আশার আলো ফুটিয়েছেন। বলেছেন-‘যারা বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীল, তারা অনাবিল শান্তির জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তারা যা চাইবে, প্রেমময় প্রভু তাই দেবেন। এটা বিশ্বাসীদের প্রতি তাদের প্রভুর মহা অনুগ্রহ। (সূরা শুরা, আয়াত ২২।) এভাবেই হতাশার অন্ধকারে আশার আলো জ্বালেন আল্লাহতায়ালা। এ রকম আশা-হতাশার আলো-অন্ধকার খুঁজে পাওয়া যাবে কুরআনের পাতায় পাতায়।

নবিজির মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা আমাদের আশার আলো দেখান। বিনিময়ে আমরা নবিজিকে কী দেব? আসলে আমাদের দেওয়া-না দেওয়ায় নবিজি (সা.)-এর কিছুই যায় আসে না। আমরা নবিজিকে দেব আমাদের জন্যই। যেই জান্নাতের সুখবর তিনি আমাদের দিচ্ছেন, সে জান্নাত যেন সহজেই পেতে পারি, তাই নবিজি (সা.) আমাদের সহজ পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন। তাও আবার নবিজির ভাষায় নয়। আল্লাহতায়ালার ভাষায়। কুরআনের শব্দে- ‘জালিকাল্লাজি ইয়ুবাশশিরুল্লাহু ইবাদাহুল্লাজিনা আমানু ওয়া আমিলুস সালিহাত। কুল লা আসআলুকুম আজরান আলাইহি ইল্লাল মাওয়দ্দাতা ফিল কুরবা। অর্থ : আল্লাহতায়ালা এভাবেই নবির মাধ্যমে মুমিন বান্দাদের খুশির খবর শোনান। হে নবি! আপনি মুমিনদের বলে দিন, এই যে তোমাদের আমি সুখবর দিচ্ছি, জান্নাতের কথা বলছি-এর বিনিময় আমি কিছুই চাই না শুধু আমার কাছে আত্মীয়দের ভালোবাসা ছাড়া।’ (সূরা শুরা, আয়াত ২৩।)

এ আয়াতকে আয়াতে ‘মাওয়াদ্দাহ’ বলে। মাওয়াদ্দাহ মানে বন্ধুত্ব প্রেম-প্রীতি ভালোবাসা ইত্যাদি। ‘মাওয়াদ্দাতা ফিল কুরবা’ মানে হলো কাছের লোকদের সঙ্গে প্রেম-প্রীতি ভালোবাসা রাখা। নবিজি (সা.) আমাদের যে ইমান এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন-তার বিনিময় তিনি চান, আমরা যেন তার কাছের আত্মীয়দের ভালোবাসি। কেন? এতে কী নবিজির কোনো উপকার আছে? না। এর রহস্য হলো, নবিজির কাছের মানুষদের ভালোবাসলে, তাদের অনুসরণ করলে, তাদের পক্ষে থাকলে জান্নাতে যাওয়ার পথে আমাদের আর কোনো বাধা রইল না।

‘মাওয়াদ্দাতা ফিল কুরবা’ বা নবিজির কাছের জন কারা এ প্রশ্নের উত্তরে নবিজি (সা.) নিজেই বলেছেন, তারা হলেন আলী-ফাতেমা, হাসান-হোসাইন। অর্থাৎ নবিজি (সা.) এবং এ চারজনকে ভালোবাসলে তাদের অনুসরণ-অনুকরণ করলেই আল্লাহর দেওয়া সুসংবাদ জান্নাত আমাদের ভাগ্যে জুটবে। (দুররে মানছুর, ৭ম খণ্ড, ৩৪৮ পৃষ্ঠা; ইবনে কাসির, ৭ম খণ্ড, ৩৬৫ পৃষ্ঠা।) কাজি ছানাউল্লাহ পানিপথি (রহ.) বলেন, ‘রাসূলের (সা.) কাছের জনদের ভালোবাসা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে এটি ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়েছে।’ (তাফসিরে মাজহারি, ১০ম খণ্ড, ৪৪০ পৃষ্ঠা।)

নবিজির কাছের জনদের আমরা এ জন্যই ভালোবাসব, তাদের দলে থাকব, যেন আমরা পথভ্রষ্ট হয়ে না যাই। বিদায় হজের ভাষণে রাসূল (সা.) তার উম্মতকে শেষ ওসিয়তস্বরূপ বলেছেন, ‘তোমাদের মাঝে আমি দুটি খুব ভারী জিনিস রেখে যাচ্ছি। এ দুটি আঁকড়ে থাকলে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব। আরেকটি আমার আহলে বাইত (আ.)।’ (মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস নম্বর ৮৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বর ১১১১৯।)

মাওয়াদ্দাতা ফিল কুরবাকে পবিত্র কুরআনের আরেক আয়াতে ‘আহলে বাইত’ বলা হয়েছে। এ পরিভাষাটিই মুমিনদের কাছে বেশি পরিচিত। ফারসি ভাষায় একে বলা হয় ‘পাক পাঞ্জাতন’। হজরত উম্মে সালমা (রা.) বলেন, ‘একদিন রাসূল (সা.) আমার ঘরে বসেছিলেন। তার গায়ে জড়ানো ছিল একটি কালো চাদর। একটু পর হাসান-হোসাইন দুই ভাই আসল। নবিজি তাদের চাদরের নিচে জায়গা করে দিলেন। তারপর খাতুনে জান্নাত মা ফাতেমা এবং শেরে খোদা আলী এলেন। নবিজি তাদেরও চাদরে ঢেকে নিলেন। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! এরা হলো আমার আহলে বাইত। এদের আপনি পবিত্র করুণ। এরাই বেশি হকদার। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহতায়ালা সূরা আহজাবের ৩৩ নম্বর আয়াত নাজিল করে জানিয়ে দিলেন, ‘হে আহলে বাইত, আল্লাহ সব পঙ্কিলতা ধুয়ে-মুছে তোমাদের পূতপবিত্র রাখতে চান।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বর ২৫৩৮৬, মুজামুল কাবির, হাদিস নম্বর ২৬০২।)

হায়! বিশ্ব মুসলিম আজ কুরআনহারা। আহলে বাইত ভোলা। তাই তো নবিজির ঘোষণা অনুযায়ী তারা পথ হারিয়ে এখানে ওখানে ঠোকর খাচ্ছে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের কুরআনপ্রেমিক-আহলে বাইত প্রেমিক হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Email: noorahmadbangladesh22@gmail.com

 

Facebook Comments Box

Posted ১২:৪৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩

bangladoinik.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com

এ বিভাগের আরও খবর

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক
ফখরুল ইসলাম
সহসম্পাদক
মো: মাজহারুল ইসলাম
Address

2nd floor, Opposite building of Muradnagar Thana gate, Muradnagar-3540, Bangladesh

01941702035, 01917142520

bangladoinik@gmail.com

জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com