ড. মাওলানা কামরুল ইসলাম বিন কাসেম | সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট | 320 বার পঠিত
প্রতিবছরই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত ১৬ জুলাই বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণবিষয়ক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রথম প্রবন্ধে, বিএমএ’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ডা.মুশতাক হোসেন বলেন, ‘২০২২ ও ২০২৩ সালের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের মধ্যে কোনো বিরতি ছিল না। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জনঘনত্ব, গ্রাম ও শহরে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে খারাপ করেছে। এবার ডেঙ্গুর চারটি ধরনেই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। যা জাতীয় উদ্বেগের কারণ। এখন জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি চলছে।’
দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণ কী?
পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহতায়ালা তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা রুম : ৪১) ‘স্থল’ বলতে মানুষের বাসভূমি এবং ‘জল’ বলতে সমুদ্র, সামুদ্রিক পথ এবং সমুদ্র-উপকূলে বসবাসের স্থান বোঝানো হয়েছে। ‘ফাসাদ’ (বিপর্যয়) বলতে ওইসব আপদ-বিপদকে বোঝানো হয়েছে, যার দ্বারা মনুষ্য-সমাজে সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা বিনষ্ট হয় এবং মানুষের শান্তিময় জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এখন জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি চলছে। বিশেষজ্ঞ দ্বারা স্বীকৃত, ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশা পরিষ্কার এবং ঠান্ডা পানিতে জন্ম ও বংশ বিস্তার করে। বাসাবাড়িতে বা আশপাশে পরিত্যক্ত কৌটা, ডাবের খোসা, ফুলের টব, বালতি, ফ্রিজ ও এসির নিচের জমে থাকা পানি থেকেও মশার জন্ম হয়।
সচেতন হয়ে বিপর্যয় রোধে অন্তত সাত দিন পরপর এগুলো পরিষ্কার করা উচিত; না হলে বিপর্যয় আরও বাড়বে। বিপর্যয় বাড়া-কমা আমাদেরই হাতে। আমরা যদি পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখি তাহলে খুব সহজেই ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পেতে পারি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে মহানবি (সা.) হাদিস শরিফে ইরশাদ করেছেন-হজরত আবু মালেক আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,-‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অংশ।’ (সহিহ মুসলিম)।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইসলামের মৌলিক নির্দেশনা ও ইমানের অঙ্গ। এটা শুধু শরীর এবং কাপড়ের বেলায় না। পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতিও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, পরিবেশ দূষণের কারণে মানবসমাজে বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়ায়। ইসলামের দৃষ্টিতে ‘অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করার চেয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উত্তম’। আধুনিক যুগে চিকিৎসাবিজ্ঞান ইসলামের সে থিওরি স্বীকার করে ঘোষণা করে, ‘রোগ-প্রতিরোধ রোগ নিরাময়ের চেয়ে শ্রেয়’। রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র লোকদের ভালোবাসেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন তাদের, যারা অত্যধিক পবিত্রতা অর্জনকারী’। (বাকারা-২২২)।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন এবং পুলিশসহ সামাজিক সংগঠনগুলো থেকে বিভিন্ন সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এখানে ডিএমপি থেকে দেওয়া কয়েকটি নির্দেশনা উল্লেখ করছি-
১. বাড়ির আশপাশ যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব কিংবা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করুন এবং ফুলের টবে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত তিনবার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এ সময় ইত্যাদি।
আসল কথা হলো, দূষণরোধ বা পরিবেশ সুরক্ষার বিষয় অনুধাবনে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। এ এডিস মশার ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার শর্টকাট কোনো উপায় নেই। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে মানবজীবনের সমৃদ্ধি লুকিয়ে আছে প্রাকৃতিক ব্যবস্থার ওপর। পরিবেশের দূষণ, বিষাক্ত বর্জ্য নির্গমন, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ক্যানসার সৃষ্টিকারী জীবাণুসহ সব প্রতিকূলতা রোধ করে, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সুসম্পর্ক স্থাপন করে দারুণ এক পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে আমাদের। এর জন্য প্রথমেই মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে।
পরিবেশ দূষণরোধ করতেই হবে। এ নীতিতে অটল থেকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশ সংরক্ষণ সমন্বিত কর্ম-কৌশল এবং আমাদের সচেতনতামূলক প্রচারণা বাড়িয়ে দূষণ কিছুটা হলেও কমাতে হবে। তবেই ডেঙ্গু থেকে আমরা মুক্তি পাব ইনশাআল্লাহ।
না হলে উল্লিখিত আয়াতের শেষাংশে ‘আল্লাহতায়ালা মানুষের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ এর অর্থ হলো, মানুষের কর্মফলে যে, বিপর্যয় আসে সেগুলো শাস্তি হিসাবে আসে। যাতে মানুষ সতর্ক হয়ে বিপর্যয়কারী কর্ম থেকে ফিরে আসে।
জীবন পরিচালনার জন্য মানুষ যাই করুক না কেন তা যদি আল্লাহ ও রসূলের নির্দেশিত পদ্ধতি অনুযায়ী হয় তবে তা ইবাদত বলে গণ্য হবে। কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনা এবং সরকারের দেওয়া পদ্ধতি যদি আমরা সঠিকভাবে মানি তাহলে আমরা ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন বিপর্যয় থেকে মুক্তি পাব এবং সুখে শান্তিতে বাস করতে পারব ইনশাআল্লাহ।
Posted ১২:৫১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩
bangladoinik.com | faroque
জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com