রামগঞ্জ(লক্ষ্মীপুর) প্রতিবেদক | বুধবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট | 286 বার পঠিত
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ইটভাটার মাটি সরবরাহ করতে সরকারি খালে বাঁধ নির্মাণ করায় চাষাবাদ ব্যাপক হুমকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ভাদুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন ভূঁইয়ার কথিত ভাগিনা ও পশ্চিম ভাদুর গ্রামের মৃত সহিদ উল্যার ছেলে মাটি ব্যবসায়ী সোহেল এর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি উপজেলার ভাদুর ইউনিয়নের সুধারাম সরকারি খালের ১কিলোমিটার অংশে।
জানা যায়, সুধারাম সরকারি খালের ১কিলোমিটার জুড়ে তিনটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এই বাঁধের কারনে মধ্য ভাদুর, উত্তর গ্রাম, পশ্চিম ভাদুর ও কেথুড়ী গ্রামের কৃষি মাঠের ৩ শত একর ফসলি জমিতে চাষাবাদ হুমকিতে পড়েছে। কৃষকদের শুকনো মৌসুমে পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় বোরো চাষ ও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় আমন চাষে চরম দুর্গতিতে পড়তে হয়। গত কয়েক বছরে লাখ লাখ টাকার ফসলহানির ঘটনা ঘটেছে স্থানীয় কৃষকদের। এতে কৃষকরা চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন। দিন দিন বাড়ছে অনাবাদি জমির পরিমান। ভূক্তোভোগী কৃষকরা গত বছর (২১ ডিসেম্বর) দ্রুত বাঁধ তিনটি অপসারণ করে খালটি উন্মুক্ত করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালটির সুধারাম ব্রীজের পাশে ইটভাটার সামনে, ভাদুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ও পশ্চিম ভাদুর মোল্লা বাড়ির পাশে মাটি ও ইটভাটার সুরকি দিয়ে ৩টি বাঁধ দেওয়া আছে। খালটিতে পানি প্রবাহ নেই। খালটি ঘেঁষে পশ্চিম ভাদুর, মধ্য ভাদুর, উত্তর গ্রাম ও কেথুড়ী গ্রামের চারটি কৃষিমাঠের বেশীর ভাগ জমি অনাবাদি।
রামগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, রামগঞ্জ-সোনাইমুড়ি সিএন্ডবি খালের বালুয়া চৌমুহনী থেকে সোনাপুর-চিতোষী খালের সুধারাম পর্যন্ত সুধারাম নামে এ খালটির দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৩০ ফুট। খালটি ভূমি মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন।
পশ্চিম ভাদুর গ্রামের বিল্লাল, সেলিম, মফিজ মিয়া, মোতালেব হোসেন, মধ্য ভাদুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন, আলম, টেলু মিয়া, কেথুড়ী গ্রামের গোলাম রসুল, জাহাঙ্গীর, আনোয়ার সহ ১৫ জন কৃষক জানান, প্রবাহমান এ খালটিতে সব সময় পানি থাকতো, চাষাবাদ করতে তাদের কোন সমস্যা হতো না। ভাদুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন ভূঁইয়ার ভাগিনা মাটি ব্যবসায়ী মোঃ সোহেল ২০২০ সাল থেকে পেশীশক্তির প্রভাব খাটিয়ে খালে বাঁধ দিয়ে, রাস্তা নির্মান করে, ফসলি জমিতে পুকুর খনন ও টপসয়েল কেটে ট্রলি দিয়ে ইটভাটায় মাটি আনা নেওয়ার করে আসছে। কেউ এ ব্যাপারে কথা বললে তাঁকে হুমকি-ধমকীসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। বাঁধের কারনে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। অনেক দূর থেকে শত শত ফুট ডেলিভারি পাইপ দিয়ে পানি আনতে হয়। ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে পানি বেচাকেনাও হয়। তাতে অতিরিক্ত কষ্ট ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। চাষাবাদকৃত ফসল শুকনো মৌসুমে পানির অভাবে এবং বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে অনেক কৃষক চাষাবাদ ছেড়ে দিয়েছেন। তারা আরো জানান, গত বছরও পানির অভাবে তাদের লাখ লাখ টাকার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তাই তারা দ্রুত বাঁধ তিনটি অপসারণ করে খালটি উন্মুক্ত করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
অভিযুক্ত মোঃ সোহেল জানান, ৪ বছর আগে কৃষকদের উপকারের জন্য বাঁধ গুলো দিয়েছি। আমি এখন আর মাটির ব্যবসা করি না। বাঁধ গুলো কেটে দিলে সমস্যা নাই।
ভাদুর ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপ সহকারি কৃষি অফিসার তুহিন অধিকারী জানান, খালে বাঁধ দেওয়ার কারনে পানির অভাবে কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারছেন না। তাদের উৎপাদিত ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে,এটা সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। কৃষকরাও তাদের এ সমস্যার কথা জানিয়েছেন। খালের বাঁধ গুলো কেটে দেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
৩নং ভাদুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন জানান, বাঁধ গুলো অনেক আগে দেওয়া হয়েছে। তার সময়কালে তিনি কাউকে সরকারি খালে বাঁধ দিতে দেন নাই। এ বাঁধ গুলো অপসারন করা খুবই জরুরি। তিনি উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে বাঁধ অপসারন করার উদ্যোগ নিবেন।
রামগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রায়হানুল হায়দার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। এতে চাষাবাদে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। আমরা উপকারভোগী ও কৃষকদের সাথে কথা বলে বাঁধ গুলো কেটে খালটি উম্মুক্ত করার ব্যবস্থা করবো।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: শারমিন ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, সরকারি খালে বাঁধ দেওয়ার কোন নিয়ম নাই। এটি একটি অপরাধ। খালে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ রাখার বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ও কৃষকরা আবেদন করেছে। এ বিষয় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Posted ৪:২০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪
bangladoinik.com | Belal Hossain
জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com