শুক্রবার ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

হাসপাতালের পাশে আওয়ামী লীগ নেতার অবৈধ ইটভাটা

কয়রা প্রতিনিধি   |   শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   291 বার পঠিত

হাসপাতালের পাশে আওয়ামী লীগ নেতার অবৈধ ইটভাটা

খুলনার কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মাত্র একশ’ মিটার দুরে গড়ে তোলা হয়েছে এবিএম ব্রিকস নামের ইটভাটা। এর নেই বৈধ কোন কাগজপত্র। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও বন্ধ হয়নি ভাটার কার্যক্রম। অভিযোগ উঠেছে, ইটভাটা বন্ধে নেয়া হয়নি যথাযথ পদক্ষেপ। প্রশাসন লোক দেখানো জরিমানা করেন। পরে গোপনে সেই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ৩১ বছর ধরে বিরামহীনভাবে চলে আসছে অবৈধ ইট ভাটাটি।

ইট ভাটার নিকটে শুধু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নয়। এর গা ঘেঁষে রয়েছে আমাদী তকিম উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আমাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অগ্রণী ও কৃষি ব্যাংকের শাখা অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর অফিসসহ একটি বাজার।

জানা গেছে, ওই ইটভাটার মালিক কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও আমাদি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমীর আলী গাইন। তার নিজ বাড়ির সামনে ফসলি জমিতে চলছে কাঠ পুড়িয়ে ইট পোড়ানোর মহা উৎসব। বর্তমানে টানা দুই মাস কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এতে কাঠ পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে জায়গীরমহল গ্রামটি।

গ্রামবাসী জানান, প্রায় তিন হাজার লোকের বসবাস ওই গ্রামে। শুরু থেকেই ভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধে প্রতিবাদ করছে তারা। অনেকবার মানববন্ধনসহ সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। এতে কাজ না হওয়ায়, বাধ্য হয়ে মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে তারা। তারা অভিযোগ তোলেন, স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। নদীর অপর পাশে দুইটি ইটভাটা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু মোটা অঙ্গের টাকা বিনিময় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর অবৈধ ইটভাটা চলছে কয়রায়। এবিএম ব্রিকস ছাড়াও আমাদী ইউনিয়নের নাকশা গ্রামের পাশে কপতোক্ষের চরে ১২ একর চর দখল করে সোহরাব ব্রিকস ফিল্ড, একরাম ব্রিকস ও একেএস ব্রিকস নামে তিনটি অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ কাগজপত্রহীন দখলবাজ ইটভাটা উচ্ছেদে উপজেলা প্রশাসন নিচ্ছে না কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। ড্রাম চিমনির অবৈধ ভাটাগুলোতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

ওই গ্রামের হাফিজুল ইসলাম জানান, ভাটা থেকে ইট পরিবহনের জন্য সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে ট্রলি।
এতে বিদ্যালয়গামী শিশু শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে থাকে। ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় অভিভাবকদের। দীর্ঘদিন ধরে ভাটায় নির্গত ধোঁয়া ও ধুলাবালুতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ইট পরিবহনে বেপরোয়া ট্রলির কারণে বেহাল হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৯ অনুযায়ী, বিশেষ কোনো স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। কিন্তু মেসার্স এবিএম ব্রিকস এই আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে বছরের পর বছর।

এবিএম ব্রিকসের মালিক আমির আলী গাইন বলেন, শুধু কয়রায় নয়, আশেপাশের কোন উপজেলা ভাটার কোন অনুমতি নেই। আমি পরিবেশের সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদন করে টাকা জমা দিয়ে রাখছি। ৩১ বছর ধরে আমার ভাটা চলছে। এলাকায় তেমন শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। আমার ইটভাটার কারণে এলাকার কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয়।কিছু মানুষের ভালো কিছু লোক দেখতে পারে না তারাই মাঝে মাঝে খোঁচায়৷

কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ইটভাটার নির্গত ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে চোখ জ্বালাপোড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যায় ভুগতে হয় স্থানীয় মানুষকে। তাছাড়া হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে আসা লোকজনকেও ভুগতে হয় নানা সমস্যায়। ইটভাটাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া দরকার বলে জানান তিনি।

পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার বলেন, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নদীর চরে বেআইনিভাবে কাঠ পুড়িয়ে ভাটা গুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। দ্রুত অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি পরিবেশের ক্ষতি না করে পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা স্থাপনের আহবান জানান।

খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে গড়ে ওঠা ইটভাটার কোন বৈধতা নেই। খুব তাড়াতাড়ি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Facebook Comments Box

Posted ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪

bangladoinik.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com

এ বিভাগের আরও খবর

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক
ফখরুল ইসলাম
সহসম্পাদক
মো: মাজহারুল ইসলাম
Address

2nd floor, Opposite building of Muradnagar Thana gate, Muradnagar-3540, Bangladesh

01941702035, 01917142520

bangladoinik@gmail.com

জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com