বৃহস্পতিবার ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

চট্টগ্রামে রমরমা কোচিং বাণিজ্য, সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের এক শিক্ষক একাই পড়ান ৩০০এর বেশী ছাত্র-ছাত্রী

ইসমাইল ইমন চট্টগ্রাম প্রতিনিধি   |   রবিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   265 বার পঠিত

চট্টগ্রামে রমরমা কোচিং বাণিজ্য, সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের এক শিক্ষক একাই পড়ান ৩০০এর বেশী ছাত্র-ছাত্রী

সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নানাবিধ নিষেধের পরও চট্টগ্রামে বন্ধ হচ্ছে না কোচিং বাণিজ্য। শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে সঠিকভাবে পাঠদান না করায় শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়তে কিংবা কোচিং সেন্টারে যেতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকটা শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের জিম্মি করেই শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।গত কিছুদিন আগে কলেজিয়েট স্কুলের সুকান্ত স্যারের রমরমা প্রাইভেট বানিজ্য শিরোনামে নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ হলে তা বন্ধ হয়ে যায়।

অভিযোগ রয়েছে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করছেন। চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষকদের নামে শতাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ভোগ করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও প্রাইভেট কিংবা কোচিংয়ের নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিমুখ হয়ে পড়ছে।

সরেজমিন নগরীর কলেজিয়েট স্কুলের পিছনে উত্তর নালা পাড়া মনিকা ফার্মেসির সামনে শামশুল উকিলের বিল্ডিং এর চতুর্থ তলায় ২০০০০ টাকা ভাড়ায় পুুরো ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে নিজে একাই পড়ান বিভিন্ন স্কুলের তিনশোর উপরে ছাত্র-ছাত্রী। সপ্তাহে তিনদিন করে ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণী ও এসএসসি পরীক্ষার্থী নিয়ে রুটিন করে সারাদিন এবং রাত আটটা পর্যন্ত পড়ান।

শাহেদ স্যার চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের ডে সিপ্টের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হলেও প্রায় সময় উনাকে বেলা দুইটার পর থেকেই কোচিং বাণিজ্যে দেখা যায়। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দুই শিপ্ট স্কুলে মনিং শিপ্ট শেষ হয় সাড়ে এগারোটা আর ডে শিপ্টের সময় ১১ থেকে ৪:৩০ মিনিট। এব্যাপারে উনাকে একাধিকবার জানতে চাওয়া হলে উনি একবারে স্বাভাবিক ভাবেই বলেন আমার ক্লাশ নেই তাই চলে এসেছি। প্রতিজন শিক্ষার্থী থেকে মাসে নেন ১২০০ প্রতিমাসে অগ্রিম টাকা দিয়েই পড়তে হয়।অথচ অন্যান্য শিক্ষকরা মাস শেষ হলেই পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই ফি পরিশোধ করতে হয়।কিন্তু শাহেদ স্যার নেন অগ্রিম এবং ঠিকমত আদায় করতে রেখেছেন একজন কেরানী।স্কুলের সরকারি বেতন ছাড়া উনার প্রতিমাসে কোচিং থেকে আনুুমানিক আয় ১২০০*৩০০=৩০২০০০ টাকা।
নগরীর উত্তর নালাপাড়া এলাকায় চট্টগ্রামের বেশির ভাগ নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবস্হিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করে বেশিরভাগ কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। ওই এলাকার বিভিন্ন ভবনে রুম ভাড়া নিয়ে এসব কোচিং সেন্টার চলছে। কলেজিয়েট স্কুলের পাশেই রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি সরকারী বালিকা বিদ্যালয়।
চট্টগ্রাম সিটি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি স্যারের রয়েছে স্কুলের পিছনে উত্তর নালাপাড়া এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন কোচিং সেন্টার যেখানে চকবাজারের চেয়ে বেশি কোচিং বাণিজ্য হয়। অপরদিকে নগরীর ব্যস্ততম গুরুত্বপূর্ণ চকবাজার একবারে শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হওয়াতে এটা সকলের নজরে আসলেও উত্তর নালাপাড়া এলাকার ভিতরে হওয়ার কারনে প্রশাসন, মিডিয়া ও সচেতন নাগরিক সমাজের নজরে তেমন আসেনা বিধায় বছরের পর বছর এখানে একেবারে প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন কোচিং বাণিজ্য। স্কুল গুলোর পাশেই রয়েছে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ইসলামিয়া বিশ্বাবিদ্যালয় কলেজ ও কয়েকটি প্রাইভেট কলেজ। তবে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীর সমাগম কলেজ শিক্ষকদের কোচিং সেন্টারগুলোতে। একেক বিষয়ে একেক শিক্ষকের চাহিদা রয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে।

জানা যায়, ব্যাচে বা কোচিংয়ে পড়িয়ে অনেক অভিভাবক গর্ববোধ করেন। সন্তান একাধিক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ছে- এটা প্রচার করে বেড়ান তারা। এর ফলে অন্য অভিভাবকরা বিভ্রান্তিতে পড়েন। তারা ভাবেন তাদের সন্তান বুঝি পিছিয়ে পড়ল। এভাবেই বাড়ছে কোচিং প্রতিযোগিতা। তাই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও অনেকেই সন্তানকে কোচিং বা ব্যাচে দিচ্ছেন।

নগরীর পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘সন্তানরা বিভিন্ন কলেজ শিক্ষকের কাছে জিম্মি। যারা প্রাইভেট পড়ে তাদের অনেক বেশি নম্বর দেন শিক্ষকরা। আর যারা ওইসব স্যারের কাছে পড়ে না তাদের কম নম্বর দেয়া হয়।’আরেকজন অভিভাবক এই প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করে জানতে চান- চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলেজিয়েট স্কুলের সুশান্ত স্যার তো একজন মানুষ! উনি বা আরো যারা আছেন টাকার জন্য সকাল থেকে টানা রাত আটটা পর্যন্ত শুধুই কোচিং করান উনাদের মাথা শরীর এগুলো কি কম্পিউটার? এতোক্ষণ কিভাবে টানা একজন মানুষের পক্ষে প্রাইভেট পড়ানো সম্ভব?সরকারি নিয়ম বা ডাক্তারি মতে একজন মানুষ কতোক্ষণ পড়াতে পাড়েন?এইগুলো শুধুই আমাদের অভিভাবকদের ধোঁকা দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন”।

এইরকম কয়েকজন অভিভাবকের কথাশুনে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে নগরীর উত্তর নালাপাড়ার কয়েকটি কোচিং সেন্টারে সরেজমিনে ঘুরে দেখাযায় আসলেই সচেতন অভিভাবকদের কথাই সত্য!কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কিছুই বুঝিয়ে দেওয়ার সময়,পরিবেশ কোনটিই নেই এখানে।এক ব্যাচে ৬০/৭০ জন শিক্ষার্থী স্কুলের ক্লাশের মতো। এখানে কিভাবে কাকে কে বুঝিয়ে দিবেন?স্যার শুধুই বোর্ডে লিখে যাচ্ছেন, আর ছাত্ররা এইগুলো দেখে দেখে খাতায় লিখেই নিয়ে যাচ্ছে। এখানেই শান্তিও আনন্দ কারন স্যারের প্রাইভেট খাতায় নাম থাকলে পরীক্ষায় ভালো নাম্বারতো অন্ততপক্ষে পাওয়া যাবে।আর কেউ কেউ ধারণা করছেন এখানে কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত স্যাররাও কোন একটি সিন্ডিকেটে জড়িত আছেন।উনারা পারস্পরিক কথাবার্তা বলে একজন ছাত্র-ছাত্রীকে আরেকজনের চায়তে নাম্বার বাড়িয়ে দেওয়ার একটি কৌশল অবলম্বন করেন।

এই বিষয়ে জানতে চায়লে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জনাব মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কোচিংনির্ভর পড়ালেখা থেকে বের হওয়ার জন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। স্কুলগুলোতে ঠিকমতো শিক্ষকরা পাঠদান করছেন কিনা সে ব্যাপারে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের তদারকি করতে হবে। এগুলোর অভাবে নগরীর অলিতে-গলিতে অসংখ্য কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। তবে এসব কোচিং সেন্টারের তালিকা বোর্ডের কাছে নেই। আপনারা ইলেকট্রনিক , প্রিন্ট মিডিয়াতে তুলে দরুন বা ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের জানান,আমরা সরকারী বিধিমতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করবো।

Facebook Comments Box

Posted ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪

bangladoinik.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com

এ বিভাগের আরও খবর

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক
ফখরুল ইসলাম
সহসম্পাদক
মো: মাজহারুল ইসলাম
Address

2nd floor, Opposite building of Muradnagar Thana gate, Muradnagar-3540, Bangladesh

01941702035, 01917142520

bangladoinik@gmail.com

জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com