শনিবার ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

লবণ পানির অগ্রাসন থেকে মুক্তি চায় উপকূলবাসি,ফিরতে চায় কৃষিতে

ইমরান হোসেন (জাকি)কয়রা প্রতিনিধি   |   বৃহস্পতিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   180 বার পঠিত

লবণ পানির অগ্রাসন থেকে মুক্তি চায় উপকূলবাসি,ফিরতে চায় কৃষিতে

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে সুন্দরবন উপকূল খুলনার কয়রা পাউবোর বেঁড়িবাধ ছিন্দ্র করে অবৈধ পাইপ দিয়ে এলাকায় কৃষি জমিতে লবণ পানি উত্তোলন করে চিংড়ী চাষ করায় দিন দিন কৃষি জমির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়া, ফসলের চাষের অনুপোযোগী হয়ে পড়া, বেঁড়িবাঁধকেও আরও বেশি দুর্বল করে তুলা এবং লবণ পানির প্রভাবে জীব-বৈচিত্র্যকে ধ্বংস হওয়ার কারণে এলাকাবসী লবণ পানির অগ্রাসন থেকে মুক্তি চায়। লবণ পানি উত্তোলন বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে দাবি ও আন্দোলন করে আসছে । তারা লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ করে কৃষি কাজে ফিরতে চান।

জানা যায়, উপকূলীয় এই অঞ্চলে নব্বইয়ের দশকে
বীজ বুনলে সোনার ফসল ফলত, গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ ছিল। কিন্তু পাউবোর বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে পাইপ বসিয়ে অবৈধ ভাবে লবন পানি উত্তোলন করে ঘের ব্যবসার কারনে এই উপকূলের মানুষ নব্বইয়ের দশকে কৃষি থেকে উৎখাত হতে থাকে, ভূমিহীন হয়ে যেতে থাকে প্রান্তিক কৃষক, বেকার হয়ে পড়ে বর্গা চাষি ও কৃষি শ্রমিক।

স্থানান্তরিত হয়ে অন্য জায়গায় বসতি স্থাপন করছে।জনগণের দাবির পেক্ষিতে স্থানীয় নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামানের হস্তক্ষেপে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি গত ১৮ জানুয়ারী দুপুরে উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের নয়ানী গ্রামে বেঁড়িবাঁধ ছিদ্র করে অবৈধ পাইপ বসিয়ে লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ করেন। এসময় তারা পাইপ গুলো ভেঙ্গে দেন। এর আগে গত বছর ১নং ওয়ার্ডের গিলাবাড়ী সিংড়ের চর লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ করেন।

পাউবো সূত্রে জানা যায় , কয়রা উপজেলায় লবণ পানির চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ৪,২০০ টি, যার আয়তন প্রায় ৩,৭০০ হেক্টর।
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কৃষক শাহাবুদ্দিন বলেন, লবণ ফসলের জন্য ক্ষতিকর। লবণের সঙ্গে যুদ্ধ করেই টিকে আছি। আমাদের অন্য কোথাও যাওয়ার সামর্থ্য নেই। আগে মাছ চাষ করতাম এখন ২ বছর ধান চাষ করছি ভাল ফলনও পাচ্ছি। লবণ পানি বন্ধ হলে সোনার ফসল ফলতো।

একই গ্রামের আসমা আক্তার এলাকা থেকে চলে যেতে চান। তিনি বলেন, এখানে জীবনযাপন খুব কঠিন। দুটি শিশুসন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছে। লবণাক্ততার সঙ্গে যুদ্ধ করে আর টিকতে পারছি না। এলাকা লবণ পানি মুক্ত হলে সকলে জীবন জিবিকার ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।

মহেশ্বরীপুর গ্রামের রাজা গাজী বলেন,লবণের আগ্রাসন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য স্থানীয় মানুষেরা আবার তাদের পূর্ব পুরুষের পেশা তথা কৃষি কাজের দিকে ঝুঁকে পড়তে চান। লবণ পানির ঘের শুধুমাত্র কৃষি পেশাকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দেয়নি বরং জীব বৈচিত্র্যর জন্য হুমকি স্বরূপ। এ ছাড়া নাম না প্রকাশ করার স্বার্থে একাধিক ব্যক্তি জানায়, উপজেলার প্রভাবশালীরা ঘের ব্যবসার সাথে জড়িত।তারা তাদের নিজ স্বার্থের কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেঁড়িবাধের রাস্তা কেটে প্লাষ্টিকের পাইপ বসিয় লবণ পানি উত্তোলন করে ঘের ব্যবসা চালু রেখেছে। তাই লবণ পানি বন্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ, উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিং এ কয়েক বার রেজুলেশন হলেও লবণ পানি বন্ধ হচ্ছে না। অবৈধ পাইপ অপসারন করে লবন পানি মুক্ত পরিবেশে যাতে ফিরে পায় তার আশা করছে এলাকাবাসি।

মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ শিকারী বলেন, নদনদীতে অস্বাভাবিক লবণাক্ততার প্রভাবে পাল্টে যাচ্ছে মহেশ্বরীপুরসহ পুরো উপকূলের পানি, মাটি ও পরিবেশের গুণগত চরিত্র। মানুষের সুপেয় পানির যেমন অভাব দেখা দিচ্ছে, তেমনি কৃষি, মৎস্য চাষ ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রথমে লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। পর্যায় ক্রমে ইউনিয়নটি লবণ পানি মুক্ত করা হবে।সকলের সম্মিলিত ভাবে মহেশ্বরীপুরের মতো উপজেলার স্বার্থে লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ করা উচিত।

পাউবোর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ‘ওই লবণ পানি বন্ধ হওয়া উচিত বেঁড়িবাধ রক্ষা ও ওই অঞ্চলের মানুষের জীবন মান উন্নয়নে। আমরা এলাকায় আমরা বেঁড়িবাধ কেটে লবণ পানি তুলতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। বেড়িবাঁধ ছিদ্র না করতে বারবার মাইকিং করেছি। স্থানীয় প্রশাসন সহ সকলকে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামাল হোসেন বলেন এর কাছে জানতে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এব্যাপারে খুলনা-৬ আসননের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি নিজেই দীর্ঘ দিন লবণ পানি বিরোধী আন্দোলনের সাথে সংযুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন,মিষ্টি পানির আধারগুলোতেও লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ভয়াবহ বার্তা।লবণ ফসলের ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সমস্যা প্রতিরোধে এখনই সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ না করলে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে। বাধাগ্রস্ত হবে উপকূল কেন্দ্রিক সরকারের সকল এসডিজি অর্জন।এলাকার সার্বিক উন্নয়ন বিবেচনায় উন্নয়নের স্বার্থে এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। এজন্য লবণ পানি মুক্ত করে মানুষের সুন্দর বসবাসের জন্য উপযোগী করে তুলতে হবে।

Facebook Comments Box

Posted ৪:২৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

bangladoinik.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com

এ বিভাগের আরও খবর

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক
ফখরুল ইসলাম
সহসম্পাদক
মো: মাজহারুল ইসলাম
Address

2nd floor, Opposite building of Muradnagar Thana gate, Muradnagar-3540, Bangladesh

01941702035, 01917142520

bangladoinik@gmail.com

জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com