বৃহস্পতিবার ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

শিশুর মতো দেখতে হলেও ছমিরের বয়স ৩২

ভূরুঙ্গামারী( কুড়িগ্রাম ) প্রতিনিধি :   |   মঙ্গলবার, ০৫ মার্চ ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   165 বার পঠিত

শিশুর মতো দেখতে হলেও ছমিরের বয়স ৩২

বয়স ৩২ বছর হলেও এখনও দেখতে হুবহু শিশুর মতোই রয়ে গেছে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বাসিন্দা আছর উদ্দিন। তার উচ্চতা প্রায় ৪০ ইঞ্চি। শুধু তাই নয় শিশু সুলভ আচরণ নিয়ে সারাদিন খেলাধুলাও করছেন গ্রামের অন্যান্য শিশুদের সাথে। বর্তমানে তার দরিদ্র বাবা-মা দেখাশোনা করলেও আছর উদ্দিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা। এদিকে জন্মগত ত্রুটির কারণে এমন রোগে আক্রান্ত এসব সন্তান উন্নত চিকিৎসায় ভালো হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানায় চিকিৎসক।


সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়ির বাইরে খেলাধুলায় মত্ত থাকা শিশুদের দেখে বোঝার উপায় নেই সেখানে রয়েছেন ৩২ বছর বয়সী আছর উদ্দিন ওরফে ছমির। এক মনেই খেলাধুলা করছেন শিশুদের সাথে। আবার কখনও বাবার হাত ধরে যাচ্ছেন বাজার বা অন্য কোথাও। এছাড়াও বাড়ির পাশের দোকানে যাচ্ছেন শিশুদের মতোই কিছু কিনে খাবে বলে।

গোপালপুর গ্রামের চেয়ারম্যান পাড়ার মো: আজিম উদ্দিন ও আছিয়া বেগম দম্পতির ছেলে আছর উদ্দিন। সে এখনও শিশুর মতো জীবন যাপন করলেও তার ছোট ভাই বিয়ে করে জন্ম দিয়েছেন সন্তান। এই দরিদ্র দম্পতির এক মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে আছর উদ্দিন ২য় এবং ছেলের মধ্যে বড়। ১৯৯২ সালে ২৪ মে জন্ম হয় আছর উদ্দিনের।

আছর উদ্দিনের বাবা-মা জানায়, জন্মের পর থেকেই সে অস্বাভাবিক। বয়স হলেও শিশুর মতোই লালনপালন করছেন তাকে। ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে দেখিয়েছেন চিকিৎসকও। তারপরও শরীরে নানা সমস্যা নিয়ে শিশুই থেকে গেছেন আছর উদ্দিন। নিজেদের অবর্তমানে এই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত তারা।
৩২ বছরের ছমিরের মা আছিয়া বেগম বলেন, যখন আমার ছেলের ২ বছর বয়স হয় তখন দিশা পাইছে আমার ছেলের শারীরিক সমস্যা আছে। পরে তাকে স্বাভাবিক করে তুলতে অনেক ডাক্তার কবিরাজকে দেখাইছি। ডাক্তার আমাকে বলছে আপনার ছেলে স্বাভাবিক হবে না। তার পরেও তাকে মাঝে মাঝে ডাক্তারকে দেখাইছি। এখন তো তার বয়স অনেক হয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক হয়নি। এখন তার ঘাড়ের সমস্যা, পেটের সমস্যা, আরও অনেক শারীরিক সমস্যা তার।

তিনি আরও বলেন, ছমির যেদিন কান্না শুরু করে,কান্না থামে না। যখন রেগে যায় তখন বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তাকে বাড়িতে রেখে কোথাও যেতে পারি না, কোথাও গেলে মনটা আমার বাড়িতে পড়ে থাকে তার জন্যে। তার সাথে সবসময় একজন থাকতে হয়। গোসল করায় দিতে হয়, খাওয়াইতে হয়। জামাকাপড়ও পড়াই দিতে হয়। সংসারে খুব কষ্ট আমাদের। তার পরেও ছেলেকে এখনো আদর যত্নে রাখছি। মাঝে মাঝে চিন্তা করি আমি মারা গেলে আমার ছেলেটাকে কে দেখবে এই চিন্তায় কিছু ভালো লাগে না।

প্রতিবেশী আকবর আলী নামের একজন বলেন, আছর উদ্দিন ছমিরকে ছোট বেলা থেকেই প্রতিবন্ধীর মতো দেখছি। সব সময় ছোট বাচ্চাদের সঙ্গেই খেলাধুলা করে। তার আসলে শারীরিক বৃদ্ধির সংখ্যা নেই। ১৯৯২ সালে তার জন্ম। এখন তার বয়স ৩২ বছর হলেও ছোটদের সাথেই মিশে সবসময়। বিয়েশাদি তো দূরের কথা, সে কোন কাজকর্ম করতে পারছে না। তার পরেও তার দরিদ্র বাবা মা অনেক কষ্ট করে তাকে লালন পালন করছে। ছমিরের সাথের ছেলেরা বিয়ে করে ১-২টি করে সন্তানের বাবা হয়েছে। আর ছমির এখনো শিশুর মতোই রয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, মায়ের গর্ভাবস্থায় ত্রুটি জনিত কারণে এমন খর্বাকৃতির সন্তানের জন্ম হয়। এজন্য সন্তান গর্ভে থাকার সময় নিয়মিত চেকআপ আয়োডিন ও পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পরামর্শ এই চিকিৎসকের।

তিনি আরও বলেন, উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে আছর উদ্দিনকে কিছুটা হলেও সুস্থ করে তোলা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

অপর দিকে গ্রামের অন্যান্য শিশুরাও আছর উদ্দিনকে শিশু মনে করে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলাধুলা করে তার সাথে। আর স্থানীয়রা জানান, আছর উদ্দিনের সম বয়সীরা বিয়ে করে ঘর-সংসার করলেও সে রয়ে গেছে মায়ের কোলে।

৩২ বছর বয়সী আছর উদ্দিনের ওরফে ছমিরের খেলার সাথী ৮ বছর বয়সী শিশু সিনথিয়া আক্তার বলে, ছমির আমার চাচা হয়। আমরা একসাথে সমসময় খেলি। ছমির চাচা কারও সাথে খারাপ ব্যবহার করে না, সে খুব ভালো মানুষ।

Facebook Comments Box

Posted ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ মার্চ ২০২৪

bangladoinik.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com

এ বিভাগের আরও খবর

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক
ফখরুল ইসলাম
সহসম্পাদক
মো: মাজহারুল ইসলাম
Address

2nd floor, Opposite building of Muradnagar Thana gate, Muradnagar-3540, Bangladesh

01941702035, 01917142520

bangladoinik@gmail.com

জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com