শুক্রবার ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

আজ ১লা মুহররমঃ হিজরি নববর্ষ

তাজ মাহমুদ   |   সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   44 বার পঠিত

আজ ১লা মুহররমঃ হিজরি নববর্ষ

একমাত্র হিজরি সনই বর্তমান বিশ্বের সব তাওহিদবাদী জনতার কাছে সমানভাবে সমাদৃত, অতি পবিত্র, মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ বর্ষপঞ্জি। দেখতে দেখতে আরেকটি হিজরি বর্ষ বিদায় নিল। মহাকালের অতলগর্ভে আরেকটি বছর হারিয়ে গেল। সূচনা হলো আরেকটি নতুন বর্ষেরঃ১৪৪৬ হিজরি। ইসলামের বিধিবিধান হিজরি সন ও চান্দ্র তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত। ধর্মীয় আচার–অনুষ্ঠান, আনন্দ উৎসবসহ সব ক্ষেত্রেই মুসলিম উম্মাহ হিজরি সনের ওপর নির্ভরশীল।

মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহারোপযোগী করে আল্লাহ তাআলা সময়কে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেছেন। যেমন দিন, রাত, মাস, বছর ইত্যাদি। বছরকে আমরা সাল বা সন বলি।  সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর আবর্তনের সময়কালকে সৌরবর্ষ এবং পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের আবর্তনের সময়কালকে চান্দ্রবর্ষ বলা হয়।  ইসলাম অনুসারে যে সমস্ত বিষয়গুলি জড়িত রয়েছে উৎসবের সাথে, সেগুলি ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান, হিজরী  সন তথা আরবি তারিখ ও চান্দ্র মাসের সঙ্গে সম্পর্কিত উৎসব। সবকিছুতেই মুসলিম উম্মাহ হিজরি সনের উপর নির্ভরশীল।

যা মুসলিম উজ্জীবিত করে এর মধ্যে হিজরী  সন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যতম। মানুষের জীবন সময়ের সমষ্টি, সময়কে মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার করা এবং উপযোগী করে তোলা। মুসলমানদের জীবনে হিজরি সনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে গণনা হিসাবের মাস হলো বারোটি। হিজরি সনের প্রথম মাস হলো মহররম। মহররম একটি তাৎপর্যমণ্ডিত ও বরকতময় মাস।

মুসলিম ইতিহাসে এ মাসটি বিভিন্ন কারণে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। পবিত্র কুরআন এ মাসটিকে ‘শাহরুল্লাহ’ তথা আল্লাহর মাস বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আর এ মাসেই রয়েছে ফজিলতপূর্ণ ‘আশুরা’। মহররমের দশম তারিখে ঐতিহাসিক ‘কারবালা’ সংঘটিত হয়েছিল। এ ছাড়া বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই দিনে ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও এই দিনে আরও অনেক ঘটনা ঘটবে। হিজরি সন মুসলমানদের সন। মুসলমানদের উচিত এর অনুসরণ করা।

এ ক্ষেত্রে উদাসীনতা কাম্য নয়। ইসলামি ফিকাহবিদগণ চান্দ্রবর্ষের হিসাব রাখাকে মুসলমানদের জন্য ফরজে কেফায়া বলেছেন। অর্থাৎ কেউ কেউ এর খবর রাখলে সবার দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সবাই যদি এ বিষয়ে উদাসীনতা দেখায় তা হলে প্রত্যেকে গুনাহগার হবে। মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) বলেন, সৌর হিসাব রাখা ও ব্যবহার করা নাজায়েজ নয়। বরং এই এখতিয়ার থাকবে এবং কোনো ব্যক্তি নামাজ, রোজা, যাকাত, ইদ্দতের ক্ষেত্রে চান্দ্রবর্ষের হিসাব ব্যবহার করবে।

কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য বিষয়ে সৌর হিসাব ব্যবহার করবে। কিন্তু শর্ত হলো, সামগ্রিকভাবে মুসলমানদের মধ্যে চান্দ্র হিসাবের প্রচলন থাকতে হবে। যাতে রমজান, হজ ইত্যাদি ইবাদতের হিসাব জানা থাকে। এমন যাতে না হয় শুধু জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ছাড়া অন্য কোনো মাসই তার জানা নেই। হিজরি সনের উৎপত্তি : ১৭ হিজরি সন মোতাবেক ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের শাসক হজরত ওমর ফারুক রা:-এর শাসন আমলে হিজরি সন গণনা শুরু হয়।

ঐতিহাসিকদের অভিমত হলো, ওই বছর প্রথম হিজরির ১ মহররম পড়েছিল ১৬ জুলাই, ৬২২ সাল রোজ জুমাবার। এটিই হচ্ছে হিজরি সন প্রবর্তনের সূচনাকাল। বিশ্বের কোটি মুসলমানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জীবনধারার সাথে মিশে আছে হিজরি সন। অতীতে বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায় নানা উপলক্ষ ঘিরে সন তারিখ গণনার সুবিধার্থে বর্ষপঞ্জি প্রবর্তন করে তা অনুসরণ করে এসেছে। মুসলমানরা ফরজ বিধান পালনে ও নানা আচার-উৎসব উদযাপনের ক্ষেত্রে হিজরি সন তথা চন্দ্র মাসকে অনুসরণ করে থাকে। চাঁদের উদয়ের ভিত্তিতে মুসলমানদের ইবাদত ও ধর্মীয় বিভিন্ন দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়।

মুসলমানদের সোনালি যুগে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর ফারুক রা:-এর বিশেষ আগ্রহ ও ভূমিকায় হিজরি সন প্রবর্তিত হয়। খোলাফায়ে রাশেদার শাসনকালে মদিনাকেন্দ্রিক নগর রাষ্ট্রব্যবস্থার গোড়াপত্তন হলে অফিসিয়াল তথ্যাদি ও নথিপত্র আদান-প্রদানের দিনক্ষণের হিসাব রাখতে গিয়ে বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর অসুবিধায় পড়েন। যেহেতু তখন ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ষপঞ্জি বা একক সন চালু ছিল না।

রাষ্ট্রীয় অফিসিয়াল কার্যাদি নির্বিঘেœ ও যথানিয়মে সম্পন্ন করার প্রয়োজনে নতুন সন প্রবর্তন তখন অনিবার্য হয়ে ওঠে। আর এই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বিভিন্ন প্রদেশের দায়িত্বশীল পদস্থ ব্যক্তিরা একের পর এক তাগাদা ও পরামর্শ দিতে থাকেন খলিফা হজরত ওমর ফারুক রা:-কে। সে সময়ের ইরাক ও কুফার গভর্নর হজরত আবু মূসা আশয়ারি রা: খলিফা হজরত ওমর ফারুক রা:-এর কাছে একটি চিঠিতে লিখলেন- ‘বিশ্বাসীদের নেতা, আপনার পক্ষ থেকে আসা শাসন কার্যের সাথে, পরামর্শ এবং নির্দেশসংবলিত বিভিন্ন চিঠিপত্র ও দলিলে কোনো সন-তারিখ না থাকায় আমরা তার সময় ও কাল নির্ধারণে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হই। অধিকাংশ সময় এসব নির্দেশনার সাথে পার্থক্য করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে বলে আপনার নির্দেশ ও উপদেশ পালন করতে গিয়ে আমাদেরকে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

বিভিন্ন সময় এ ধরনের অভিযোগ ও সমস্যার কথা শুনে খলিফা হজরত ওমর রা: শীর্ষস্থানীয় সাহাবায়ে কেরাম রা: ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ব্যক্তিদের সাথে বিশেষ বৈঠকে মিলিত হন। আলাপ-আলোচনায় একটি বর্ষপঞ্জি প্রবর্তনের ওপর সবাই মতৈক্যে পৌঁছলেও কখন থেকে কী নামে বর্ষপঞ্জি করা হবে তা নিয়ে নানা মত ব্যক্ত করেন সাহাবায়ে কেরাম রা:। কেউ বললেন, রাসূল সা:-এর জন্ম দিবসের দিন ধরে বর্ষগণনা শুরু করতে, কেউ অভিমত দিলেন প্রিয় নবী সা:-এর নবুয়ত প্রকাশের বছর থেকে, কেউ বললেন নবীজী সা:-এর ওফাতের দিন থেকে, আবার কেউ পরামর্শ দিলেন মহানবী সা:-এর মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরতের দিন থেকে বর্ষগণনা শুরু করা যায়। গণতান্ত্রিক উপায়ে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা ও যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে অবশেষে রাসূল সা:-এর হিজরতের ঘটনাকে মহিমান্বিত করার জন্য মহররম মাস থেকে হিজরি নামে একটি স্বতন্ত্র সন চালু করার ঘোষণা দেন ওমর ফারুক রা:।

সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শ’ বছর ধরে হিজরি সন মুসলমানদের জীবনধারার সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। হিজরি সন হয়ে উঠেছে তাদের গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীকরূপে। বাংলা ও খ্রিষ্টীয় সন যেমন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনধারার বড় অনুষঙ্গ, তেমনি হিজরি সনকে আমরা অনুসরণ করে থাকি ইসলামী নানা দিবস ও আচার অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে। আরবি নববর্ষ মুসলিম হিসেবে গর্ব ও অহংকার এর প্রতীক। আরবি নববর্ষের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ইসলামের অনেক অনেক ইতিহাস। ইসলামের বিভিন্ন ঘটনা ও ইতিহাস থেকেই আরবি নতুন বছর বা দিনক্ষণ অথবা মাস গণনা শুরু করা হয়েছে।

তাই একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে বাংলা এবং ইংরেজি নববর্ষ বাদ দিয়ে, আরবি নববর্ষকে অত্যাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। পরিশেষে বলতে চাই, আরবি হিজরি সালের প্রতিটি মাসই বিশেষভাবে তাৎপর্যম-িত। আমরা হিজরি নববর্ষে পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার দরবারে মোনাজাত করি- হে মহান রাব্বুল আলামিন! বর্তমান বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি থেকে মুসলমান ও সকল মানবজাতিকে সুস্থতা ও সুখে-শান্তিতে-সমৃদ্ধিতে তাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবন মঙ্গল এবং বরকতময় করে তোলো। বিশ্বময় রক্তক্ষয়ী অবস্থা থেকে আমাদের রক্ষা করো। ১৪৪৬ হিজরী আমাদের সবার জীবনে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও আনন্দের বার্তা নিয়ে আসবে।

Facebook Comments Box

Posted ৩:২৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪

bangladoinik.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com

এ বিভাগের আরও খবর

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক
ফখরুল ইসলাম
সহসম্পাদক
মো: মাজহারুল ইসলাম
Address

2nd floor, Opposite building of Muradnagar Thana gate, Muradnagar-3540, Bangladesh

01941702035, 01917142520

bangladoinik@gmail.com

জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com