মোঃ মাজহারুল ইসলাম: | রবিবার, ১১ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট | 95 বার পঠিত
বেশ কয়েক বছর আগের কথা। ‘রাজনীতি না প্রতিহিংসা কলামটি লিখতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যায় পড়েছিলাম। একদিকে যেমন সহ্য করতে হয়েছিল অনেক নেতিবাচক কথা। অন্যদিকে আমার লেখা প্রায় নিয়মিত প্রকাশিত একটি পত্রিকার সহকারী সম্পাদক কলামটির এডিট করার অনুমতি চেয়েছিল। কষ্ট পেয়েছিলাম।
তবে কাঁদেনি, কিন্তু হৃদয় গহীনে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তবুও বুকে হাজার কষ্ট চাপা রেখে সহকারী সম্পাদককে অনুমতি দিয়েছিলাম। আর একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকাশ পানে চেয়ে মনে মনে বলেছিলাম, এই তোমার স্বাধীনতা এই তোমার গণতন্ত্র। কলামটি থেকে একটি ইস্যু তুলে ধরার চেষ্টা করছি ‘জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম পরিবর্তন করতে গিয়ে যে টাকা খরচ হয়েছিল, সেই টাকা দিয়ে জাতীয় কোন সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হতো। অথচ নামটি পরিবর্তনে আমার দৃষ্টিতে দেশে কোন লাভ হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।’ সেটাকে কি আমার রাজনীতি বলবো, না প্রতিহিংসা বলবো? এমনই বিষয়বস্তু নিয়ে লিখেছিলাম ‘রাজনীতি না প্রতিহিংসা’ কলামটি। তারপরও পত্রিকার সম্পাদক মহোদয় কলামটি প্রকাশ করেছিলেন।
আর একটি কলামের কথা উল্লেখ না করলেই নয়, রাজনীতিবিদ ইলিয়াস আলী’কে যখন পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন স্বামী হারা একজন স্ত্রী’র আকুতি নিয়ে একটি কলাম লিখেছিলা। তাতেও শুনতে হয়েছিল হাজারো নেতিবাচক মন্তব্য। এরপর থেকে মা, বাবা, পরিবার পরিজনের কথায় অনন্তঃ কলাম লেখা বন্ধ করে দেই। আশা করছি, আপনাদের ভালোবাসায় আবার লেখা শুরু করতে যাচ্ছি। বিষয়টি অনেকের দৃষ্টিতে অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পার। কিন্তু বর্তমান জেনারেশন এটা জানা উচিত দৃশ্যমান ছাড়াও অদৃশ্যভাবে আমরা কতটা পরাধীন ছিলাম। একজন লেখক সত্যকে সত্য বলবে, মিথ্যাকে মিথ্যা বলবে, কালোকে কালো বলবে, সাদাকে সাদা বলবে এটাই তো হওয়া উচিত একজন লেখকের মূলনীতি। আশা যাক, আজকের কলামের মূল আলোচনায়।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজপথে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। সাবেক সরকার প্রদান তার নিজস্ব চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার পরিবর্তে উল্টো সরকারী বাহিনী পুলিশ দ্বারা অত্যাচার নির্যাতন করতে শুরু করে। যারপ্রেক্ষিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সর্বসাধারণ মানুষের সমর্থন আসতে থাকে। একসময় সেই আন্দোলনের দাবী গড়ায় সরকার পতনের এক দফা দাবীতে। এক দফা দাবীতে একসময় সাবেক সরকার পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ইতিমধ্যে নোবেল বিজয়ী ও বিশ^ স্যালিব্রেটি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূস’কে প্রদান করে অন্তর্বতী সরকার গঠন করা হয়েছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন হওয়ার পর একের পর এক অতিক্রম হতে হতে আজ বিজয়ের ৫৪ বছরে দাঁড়িয়েছে আমাদের প্রাণের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। যে উদ্দেশ্যে যা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, কিন্তু দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা পূর্ণতা পায়নি। তারপরও যুক্তির খাতিরে হউক বা তর্কের খাতিরে হউক আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। তবুও নানা সীমাবদ্ধতায় আমরা আজ আবদ্ধ। যা এ দেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের আপমোড় জনসাধারণের সমর্থনে কোটাবৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হন। আন্দোলনের কোটা বিরোধী হলেও এই আন্দোলনে সুপ্ত ছিল অনেক দিনের অন্যায়ের প্রতিবাদ, বাক্স্বাধীনতার অধিকার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সংকল্প। বলা যেতেই পারে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আর ২০২৪ সালে যা হয়েছে নব্যঅভ্যুত্থান। আমি প্রত্যাশা করছি, অনেক কষ্টে অর্জিত বাংলাদেশের পরিবর্তন নয়। বরং জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার মানসম্মত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। একটি দেশ বেঁচে থাকার সুন্দর পরিবেশ শুধুমাত্র একটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে না। বর্তমানে দেশে প্রায় প্রতিটি সেক্টরে দেখা দিয়েছে ভঙ্গুরতাা। যদিও একদিনে আসেনি।
দিনের পর দিন অনিয়ম আর দুর্নীতির করাল গ্রাসে প্রতিটি বিভাগে দেখা দিয়েছে স্তবীরতা। কমন একটি কথা, তারপরও উল্লেখ করতেই হবে, শিক্ষাজাতির মেরুদন্ড। অথচ দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি অসন্তুষ্ট। বাংলাদেশের পরিবর্তন নয়, মানসম্মতভাবে বেঁচে থাকার জন্য কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতেই হবে। শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন, সমাজকল্যাণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন। ৭১’মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রচনা করতে হবে এবং সেই সাথে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রনয়ণ করতে হবে। অসহায় মুক্তিযোদ্ধা বাহির করে পুনঃবাসন করা অতীব জরুরি। এখনও মাঝে মাঝে দেখতে পাই, বীর মুক্তিযোদ্ধারা রিক্সা চালিয়ে জীবন ধারণ করছে। তা দেখে কষ্ট পাওয়ার সাথে সাথে মনে হয় আমাদের অর্জিত স্বাধীনতার মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছি । বাংলার অবিস্মরণীয় ব্যক্তিদের অবদানের ইতিহাস প্রনয়ন করতে হবে। ২০২৪ সালের নব্যঅভ্যুত্থানের কাহিনী ইতিহাসে স্থান দেওয়া প্রয়োজন। যাঁরা প্রাণ দিয়েছে তাঁদেরকে স্মরণীয় করে রাখার ব্যবস্থা করা আর যারা অবদান রেখে বেঁচে আছেন তাঁদেরকে বিশেষ সম্মানী বা অবদানস্বরুপ উল্লেখযোগ্য উপাধীতে ভূঁষীত করা।
নিরপেক্ষ মিডিয়া তৈরিতে সাহায্য করা। পক্ষপাতী মিডিয়ার বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারী চাকরিজীবীদেরকে ঘুষ-দুনীর্তি থেকে মুক্ত রাখার কৌশল প্রণয়ন করা এবং সঠিকভাবে যেন দায়িত্ব পালন করে তার ব্যবস্থা করা। শক্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল তৈরিতে সাহায্য করা। একটি অপপ্রচার এবং বিশ্বাস ভেঙ্গে ফেলতে হবে। বলা হয়ে থাকে, নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেই শুধু হিন্দু ধর্মালম্বী’সহ অন্যান্য মাইনরিটি শ্রেণির মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে। অন্য কোন রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলে অনিরাপদে থাকে। এই ভ্রান্ত বিশ্বাসটি মিথ্যায় পরিনত করতে হবে। বাস্তবে কার্যক্রম করার মাধ্যমে সেই কাজটির প্রতিফলন ঘটানো অতীব জরুরি।
আমরা অনেক দেখছি, দেখে আসছি। আশায় আশায় বুক বেঁধে যাচ্ছি। কবে এই ছোট্ট দেশ হয়ে উঠবে ন্যায়পরায়নের দেশ। নীতির দেশ। সততার দেশ। গড়ে উঠবে সবার মাঝে সম্প্রীতি। শুধু হাতছানি দিয়ে ডেকে যায় সবাই, বাস্তবে শূন্যতা। সাবেক পুলিশের আইজিপি বলেছিলেন, দুর্নীতি জিরোতে নামিয়ে নিয়ে আসবো। অথচ তার বিদায়ের পর দেখতে যা পেয়েছি আমার লেখায় উল্লেখ নাই করলাম, সবারই জানা। তারপরও আমরা মানুষ। আশা করছি, আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করছি। যদি স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটে। এবার সেই স্বপ্ন হাতছানি দিয়ে ডেকে যাবে, তা বিশ্বাস করছি না। আমাদের সবার চাওয়া বা বেঁচে থাকার মানসম্মত পরিবেশ অন্তবর্তীকালীন সরকার শুরু করবে। আর নির্বাচিত সরকার ২৪ নব্যঅভ্যূত্থান থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিকভাবে আলোকবর্তিকা হয়ে বাস্তবায়ন ঘঠাবে।
লেখক ঃ মোঃ মাজহারুল ইসলাম
কলামিস্ট, জনস্বাস্থ্যবিদ ও সমাজকর্মী
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি : এসো সচেতন হই সোসাইটি-এসই
chairman@eshoi.org
Posted ৮:০২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১১ আগস্ট ২০২৪
bangladoinik.com | Belal Hossain
জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com