আনোয়ার হোসেন | বুধবার, ২৮ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট | 40 বার পঠিত
তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনার নদী বেষ্টিত ১৩টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নের চার শতাধিক চরে ৬টি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও এখনও গড়ে ওঠেনি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করা মোট শিক্ষার্থীর ৭০ শতাংশ এবং মাধ্যমিক শেষে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর পড়ালেখার সুযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে শুধুমাত্র সুযোগ না থাকায়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের (জিইউকে) তথ্য অনুযায়ী রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর ৪৪টি নদী বেষ্টিত ৪শতাধিক চরে প্রায় ১৬ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে অর্থাৎ তিন জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশের বসবাস চরাঞ্চলে। এরমধ্যে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী সংখ্যা অন্ততপক্ষে ৩লাখ ৪৫ উচ্চ হাজার। চরাঞ্চলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে মাত্র ৬টি।
এসব বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে। চরাঞ্চলে স্থাপিত এসব বিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে থাকে শুধুমাত্র তিন হাজার শিক্ষার্থী। কিছু অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের শিশুদের মেইনল্যান্ডের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলেও বেশিরভাগ পরিবারের শিশুদের আর্থিক দৈন্যতায় পড়ালেখা বন্ধ হয়ে পড়ে। আবার চরের মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর উচ্চ মাধ্যমিক বা কলেজ না থাকায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী কলেজ পর্যায়ে ভর্তি হতে না পারায় পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র চরে স্থাপিত গণউন্নয়ন কেন্দ্র নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, সদর উপজেলার মোল্লারচর, কামারজানি, ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ও এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের ৩০টি চরে কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। এই বিদ্যালয়টিই চরের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে চরের শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তবে, চরগুলোর দূরত্ব ও বন্যাকালীন যোগাযোগ সমস্যার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েও অষ্টম শ্রেণী শেষ করতে পারে না।
নদীজ্জানের ফলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অভিভাবকের সঙ্গে বিভিন্ন চরে স্থানান্তরিত হওয়ায় অনিয়মিত হয়ে শেষ পর্যন্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় পড়ালেখা বন্ধ হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র একই বলে তিনি জানান। ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান জানান, এই ইউনিয়নের একটিমাত্র নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, সেটিও আবার ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে। একারণে অভিভাবকদের আগ্রহ থাকলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ না থাকায় শিশুদের পড়ালেখা বন্ধ হয় পঞ্চম শ্রেণী পাস করেই। ফুলছড়ি উপজেলার পারুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইসমাইল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধে প্রয়োজন প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান ব্যবস্থা চালু করা। ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ জানান, চরের বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র। একারণে সন্তানদের অন্যত্র রেখে পড়া লেখার করার সাধ্য থাকে না। এজন্য তিনি চরাঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের পরামর্শ দেন। সাঘাট উপজেলার দিঘলকান্দি চরের বারেক আলী সরকার বলেন, স্বপ্ন ছিল সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবো।
কিন্তু সুযোগ না থাকায় স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে কোনোমতে আরবি শিখিয়েছি। চিলমারি উপজেলার অষ্টমীর চরের আব্দুল খালেক মোল্লা জানান, বিএ-এমএ পাশ ছাড়া চাকুরি পাওয়া কঠিন। এজন্য সন্তানদের পঞ্চম শ্রেণী পাশ করিয়ে কৃষিকাজে যুক্ত করেছি। উত্তরাঞ্চলভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান ও উন্নয়ন গবেষক এম আবদুস সালাম জানান, ইতোপূর্বে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। এজন্য স্থানীয় ব্যক্তি ও জনগণের জমি ও অর্থদিয়ে সহায়তা ছিল। যার ফলেই চরাঞ্চলে কয়েকটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু সেই সুযোগ এখন নেই। এতে করে সরকারি উদ্যোগেই চরাঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, চরের স্থায়িত্ব ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনা করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত করা না গেলে দেশের শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন বাঁধা হয়েই থাকবে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শিশু ও পরিবারের উপর।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম বলেন, চরের শিক্ষার উন্নয়নে একটি টেকসই পরিকল্পনার প্রয়োজন। কেননা শিক্ষার উন্নয়নে জেলা এলাকাভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত না হলে দরিদ্র পরিবারে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সুযোগ মাঝপথে বন্ধ হয়ে পড়বে। গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম জানান, চলাঞ্চলের প্রতবিছর ৪-৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তরিত করতে হয়ে। এসব প্রতিষ্ঠান পুনরায় স্থাপনে জমি ও সরকারের সিদ্ধান্ত জটিলতায় বেশ বেগ পোহাতে হয়। এ কারণে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার চরাঞ্চলে বেশি বলে জানান তিনি। এছাড়াও তিনি প্রাথমিক পাস করা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় ঝড়েপড়ার হার চরাঞ্চলে তুলনামূলকভাবে বেশি বলে উল্লেখ করেন।
Posted ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৮ আগস্ট ২০২৪
bangladoinik.com | Belal Hossain
জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com