আনোয়ার হোসেন | সোমবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 64 বার পঠিত
চিঠি বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা স্মৃতি, নানা আবেগ। এক সময় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল চিঠি। মোবাইল ফোন ও ই-মেইলের যুগ আসার আগে চিঠির কদর ছিল সর্বত্র। চিঠি লেখার আবেগ বর্তমানের ম্যাসেঞ্জারের টেক্সট অথবা মেইলে পাওয়া যায় না। আগে একেকটি চিঠি যেন হয়ে উঠতো একেকজনের জীবনে প্রাণের সঞ্চার।
আজকাল দাপ্তরিক কাজ ছাড়া চিঠির ব্যবহার নেই বললেই চলে। ফলে গাইবান্ধা জেলার ১১৭ টি ডাকঘরে নেই গত তিন দশক আগের মতো কর্ম ব্যস্ততা। সরেজমিনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ডাকঘরে গিয়ে দেখা যায়, পোস্ট মাস্টারের কক্ষটিও তালাবদ্ধ। কক্ষের বাইরে দেয়ালে ঝুলানো মরিচা ধরা ডাক বাক্সটি পড়ে থাকলেও তাতে নেই কোন চিঠি।
একসময় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের চিঠি পত্র চলে আসত গাইবান্ধা প্রধান ডাকঘরে। হাজার হাজার চিঠি পত্র কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ডাক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দম ফেলার ফুরসত ছিলো না । কালের বিবর্তনে প্রতিষ্ঠানটি চিরচেনা কর্ম চাঞ্চল্য পরিবেশ যেন হারিয়েছে ।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার রহমতপুর ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার হজরত আলী বলেন, একটা সময় প্রতিদিন গাইবান্ধা থেকে শত শত চিঠি নিয়ে আসা হতো । এখন ব্যক্তিগত চিঠি আদান-প্রদান নেই বললেই চলে। শুধু মাত্র অফিশিয়াল কাজে কিছু চিঠির ব্যাবহার হয়। একটা সময় চিঠি পাঠানোর জন্য সাধারণ মানুষের লম্বা লাইন থাকতো পোষ্ট অফিসে।
মানুষ ডিজিটাল সিস্টেমের উপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বেশী। গত রোববার গাইবান্ধা প্রধান ডাকঘরে গিয়ে দেখা যায়, অফিসে প্রায় সবাই সঞ্চয় হিসাবের কাজে এসেছেন। তবে দুঃখের বিষয় চিঠি পোস্ট করতে একজনকেও পাওয়া যায়নি। চিঠি বাছাই করার টেবিলটিও খালি পড়ে ছিলো। ডাক পিয়ন কান্তি বর্মন বলেন, আমি যখন আগে চিঠি নিয়ে যেতাম মানুষ আমাকে দেখলেই তার নিজের কোন চিঠি আছে কী না জিজ্ঞেস করতো।
দৌড় দিয়ে কাছে আসতো চিঠি নেওয়ার জন্য। আর এখন খুজে খুজে অফিশিয়াল কোন চিঠি থাকলে গিয়ে দিতে হয়। চিঠি বিলি সহকারী আলতাফ হোসেন জানান, দুই যুগের বেশি সময় চিঠি বিলি করছি। একসময় নিজের ব্যাগ ভর্তি করে চিঠি বিলি করতাম। বেশির ভাগ চিঠি থাকত ব্যক্তিগত চিঠি।
বাইসাইকেলে চড়ে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চিঠি দিয়ে আসতাম। চিঠি পেয়ে কেউ আনন্দিত হতো, কেউ বা আবার বিষন্ন হয়ে পড়ত। তবে এখন চিঠি বিলি কমে গেছে। আর ব্যক্তিগত চিঠি তেমন চোখে পড়ে না। রেজিস্ট্রি করা চিঠিই এখন বেশি বিলি করতে হয়। গাইবান্ধা প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার বিপ্লব কুমার দাস জানান, চিঠি হলো যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।
চিঠির মাধ্যমে একজন আরেকজনের অনেক আপন হয়ে উঠে। পরিবারের সুখ দুঃখ প্রকাশ পায় চিঠির মাধ্যমে। আগে প্রযুক্তি এতটা উন্নত ছিল না। তাই মানুষ চিঠিকেই বেছে নিয়েছিল যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে। এখন কেউ ব্যক্তগত চিঠি দিতে পোস্ট অফিসে আসেন না।
রেজিস্ট্রি ডাক, অফিশিয়াল চিঠি, সঞ্চয় হিসাব এগুলোই বেশি দেখা যায় পোস্ট অফিসে। এখন পোস্ট অফিসে মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
Posted ৩:০৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
bangladoinik.com | Belal Hossain
জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com