গাইবান্ধা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি নং- রাজ ১০৭) ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি পদে পুনরায় মো. আশরাফুল আলম বাদশা এবং সাধারণ সম্পাদক পদে এ্যাড. গৌতম কুমার চক্রবর্তী বিশু নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সদস্যসহ অন্যান্য সকল পদের ফলাফলও ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এর আগে শুক্রবার জেলা শহরের পুরাতন জেলখানা এলাকায় গাইবান্ধা বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলে এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাদরুল আলমকে প্রধান কমিশনার করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিটি গঠন করা হয়। এতে সহকারী নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মনজুর আলম মিঠু, রফিকুল ইসলাম, শাহজালাল সরকার খোকন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুর রহমান, এম.এইচ মানিক, হাসিবুর রহমান লাবু ও এত্তাজুল ইসলাম। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাদরুল আলম বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় তিনি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় সকল ভোটার, প্রার্থী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
এবার এ নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৬শ’ ৫০ জন। এরমধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ৫ হাজার ১শ’ ২৯ জন। নির্বাচনে ১৭টি পদের বিপরীতে ৫৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরমধ্যে সভাপতি ১টি পদের বিপরীতে ২ জন, কার্যকরী সভাপতি ১টি পদের বিপরীতে ৪ জন, সহসভাপতি ১টি পদের বিপরীতে ৬ জন, সাধারণ সম্পাদক ১টি পদের বিপরীতে ২ জন, সহসাধারণ সম্পাদক ২টি পদের বিপরীতে ৪ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ১টি পদের বিপরীতে ৩ জন, অর্থ সম্পাদক ১টি পদের বিপরীতে ৪ জন, সড়ক সম্পাদক ২টি পদের বিপরীতে ৬ জন, দপ্তর সম্পাদক ১টি পদের বিপরীতে ৩ জন, প্রচার সম্পাদক ১টি পদের বিপরীতে ৩ জন, ক্রীড়া ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ১টি পদের বিপরীতে ৩ জন ও কার্যকরী সদস্য ৪টি পদের বিপরীতে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
সভাপতি পদে মাছ প্রতীকে মো. আশরাফুল আলম বাদশা ২ হাজার ৮শ’ ১৭ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী স্টিয়ারিং প্রতীকে মো. আব্দুর রশিদ সরদার পেয়েছেন ২ হাজার ১শ’ ১৮ ভোট। কার্যকরী সভাপতি পদে ফুটবল প্রতীকে মো. ময়নুল হক বি.এ ২ হাজার ৮৫ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী গোলাপফুল প্রতীকে মো. আমিনুর রহমান আমিন পেয়েছেন ১ হাজার ৩শ’ ৬০ ভোট। সহ-সভাপতি পদে ছাতা প্রতীকে মো. আব্দুল মজিদ ১ হাজার ৩শ’ ১০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তালা প্রতীকে মো. হিরু মিয়া পেয়েছেন ১ হাজার ১শ’ ৫০ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে চাবি প্রতীকে এ্যাড. গৌতম কুমার চক্রবর্তী বিশু ২ হাজার ৫শ’ ৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হাতুড়ী প্রতীকে মো. জামিনুর রহমান জামিন পেয়েছেন ২ হাজার ৩শ’ ৭৮ ভোট। সহ-সাধারণ সম্পাদক এর ২টি পদে নির্বাচন করেছেন ৪জন প্রার্থী।
এরমধ্যে বাস প্রতীকে ২ হাজার ৮শ’ ০৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ এবং কেচি প্রতীকে মো. রওশন মিয়া ২ হাজার ৩শ’ ৪১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাজমহল প্রতীকে মো. হাসাবুল হাসান দিনার পেয়েছেন ১ হাজার ৮শ’ ৭৫ ভোট। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছেন ৩ জন প্রার্থী। এরমধ্যে তলোয়ার প্রতীকে ১ হাজার ৬শ’ ৮৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. শামীম রহমান শামীম। তার নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাঞ্জা প্রতীকে মো. মশিউর রহমান হীরা পেয়েছেন ১ হাজার ৫শ’ ৮১ ভোট। অর্থ সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছেন ৪ জন প্রার্থী। এর মধ্যে একতারা প্রতীকে ২ হাজার ৫১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. আমজাদ হোসেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্লায়ার্স প্রতীকে মো. হারুন অর রশিদ পেয়েছেন ১ হাজার ২শ’ ২২ ভোট। সড়ক সম্পাদক এর ২টি পদে নির্বাচন করেছেন ৬ জন প্রার্থী। এরমধ্যে ট্রাক প্রতীকে ১ হাজার ৮শ’ ০৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. আতিকুর রহমান এবং টেলিভিশন প্রতীকে মো. অহেদুল ইসলাম পেয়েছেন ১ হাজার ৫শ’ ৩৭ ভোট। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকে মো. সুমন মিয়া পেয়েছেন ১ হাজার ৪শ’ ৩০ ভোট। দপ্তর সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছেন ৩ জন প্রার্থী। এরমধ্যে মাইক প্রতীকে ২ হাজার ১শ’ ০৪ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন মো. আশরাফুল আলম ফরিদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রিক্সা প্রতীকে মো. ছলিম উদ্দিন সরকার সেলিম পেয়েছেন ১ হাজার ৩শ’ ২৫ ভোট। প্রচার সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছেন ৩ জন প্রার্থী। এরমধ্যে করাত প্রতীকে ১ হাজার ৯শ’০৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. রাশেদুল ইসলাম।
তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চেয়ার প্রতীকে মো. নজরুল ইসলাম পেয়েছেন ১ হাজার ৫শ ৬২ ভোট। ক্রীড়া ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছেন ৩ জন প্রার্থী। এরমধ্যে ক্রিকেট ব্যাট প্রতীকে ১ হাজার ৮শ’ ৬৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বাবুল আহম্মেদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বটগাছ প্রতীকে মো. আহসান হাবিব মন্ডল পেয়েছেন ১ হাজার ৪শ’ ১৫ ভোট। এছাড়া কার্যকরী সদস্য এর ৪টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন ১৩ জন প্রার্থী। এরমধ্যে বেজী প্রতীকে ১ হাজার ৬শ’ ৪৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. মুরাদ মিয়া, টায়ার প্রতীকে ১ হাজার ৬শ’ ২৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. সজিব মিয়া, গাভী প্রতীকে ১ হাজার ৫শ’ ৩৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. আবু তাহের, পালকী প্রতীকে ১ হাজার ৫শ’ ৩৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. মুক্তার হোসেন।
এ নির্বাচনকে ঘিরে শুক্রবার সকাল থেকেই শহরের পুরাতন জেলখানা এলাকায় গাইবান্ধা বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের সামনে প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। প্রার্থীদের সমর্থকেরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে রাস্তায় আনন্দ উল্লাস করেছেন। রাস্তার দু’পাশে প্রার্থীদের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।