আনোয়ার হোসেন: | রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 51 বার পঠিত
দু’টি মনের আবেগ, অনুভুতি থেকে গড়ে উঠে ভালোবাসার সম্পর্ক। এরপর ধীরে ধীরে একে অপরকে খুব কাছে থেকে জানতে পারে। মনের মিল হলেই জীবনের বাকিটা পথ এক সঙ্গে পাড়ি দেয়ার স্বপ্ন দেখে। সুখে–শান্তিতে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে চায়। তবে বাস্তবের গল্পটা সব ক্ষেত্রে এমন হয় না।
হাতে হাত ধরে জীবনপথের চড়াই–উতরাই পার করতে গিয়ে কখনো কখনো হাত ছুটে যায়। পথটা দু’দিকে যায় বেঁকে। পথের প্রান্তে দাঁড়িয়ে তবু কি দু’জনের কখনো মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতার সেই ছন্দগুলো? একে অন্যের দিকে তাকিয়ে মন কি বলে ওঠে ‘আমাদের গেছে যে দিন, একেবারেই কি গেছে, কিছুই কি নেই বাকি’। কোনো এক বিষণ্ন সন্ধ্যায় দু’জনের একজনের কী মনে হয়, কুমার বিশ্বজিতের গানের মতো কেন বলিনি, ‘চন্দনা গো, রাগ করো না, অভিমান করে বলো, আর কি হবে?’
প্রেমিক তার প্রেমিকাকে স্মৃতিচারণ করে লিখেছে-তোমার প্রেমে পড়ার পর আমি হয়ে উঠেছিলাম শুদ্ধতম কবি। মস্তিষ্কের শেষ শিরা হতেও তোমার জন্য হৃদয় পুড়িয়ে লিখেছিলাম নষ্টালজিক সব কবিতা, গান, চিঠি। ছোটখাটো ব্যাপারগুলোতেও ছিল দারুণ পাগলামি। মায়া নিয়ে, ছাঁয়া নিয়ে সে প্রেম লাউ লতার মতো মনের করিডোর মাড়িয়ে, সিঁড়ি জানালা ছাড়িয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছিল আমার ছাঁদনাতলার ছাদে বড্ড আদরে। চোখের ভেতর নয়তারা ফুলের মতো ফুটে ছিল অকৃত্রিম দারুণ স্বপ্ন ; একদিন আমরা আমাদের হবো।
আবেগ ছিলো, প্রেম ছিলো, যত্ন ছিল, জয় করার তীব্র চেষ্টাও ছিলো। শুধু ছিলো না ভাগ্যের উপর বিধাতার আশির্বাদ। নিয়তির খেলার কাছে হার মেনে গিয়েছে সে প্রেম। হঠাৎ থেমে গিয়েছিলাম আমরা কোথাও একজন মাঝ পথে। একজন শুধু দাঁড়িয়ে রইলাম ট্রেন শূন্য একটা প্লাটফর্মে, আর অন্যজন নতুন গন্তব্যের ট্রেন ধরে চলে গেছি দূর বহুদূর। হায়!
এ সময় শুধুই মনে পড়েছে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এর এই গান-
আজ দু’জনার দুটি পথ ওগো
দু’টি দিকে গেছে বেঁকে,
তোমার ও পথ আলোয় ভরানো জানি
আমার এ পথ আঁধারেতে আছে ঢেকে।
বিশ্বাস করো; তারপর থেকে আমি আর কখনো কারোর জন্য কবিতা লিখতে পারিনি। রং তুলির হাতে পায়ে ধরেও আঁকতে পারিনি আর কোনো নতুন মুখের ছবি। একদিন যে হৃদয় মাঝে পাহাড় সমেত বিশ্বাসে ছিল সবুজ, সেখানে বাসা বাঁধলো অবিশ্বাসের করুন ক্যান্সার। মাতৃগর্ভে মৃতুবরণ করা অনাগত সন্তানের মত আমার আবেগ মরে গেল। আমি কখনো কোন হাতের নরম আঙুলে রাখতে পারিনি আমার আঙুল। পিরিতের উপরে এত অরুচি আসলো যে স্বপ্ন ভাঙার ভয়ে নিজের পাশ ঘেষে বসতে দেইনি কাউকে। একটা অদৃশ্য বৃত্তে আটকা পড়েছিলাম আমি, ওই বৃত্তের ভেতর পা রাখার সাহস কারোর নেই।
গভীর প্রেমে মানুষ একবারই পড়ে। গভীর প্রেম নিয়ে একজনের জন্যই কবিতা গান চিঠি লেখে। ছেড়ে গেলে ওই একজনের জন্যই মানুষ জনমভর দুঃখ করে গোপনে অথবা প্রকাশ্যে। পরের বার যে প্রেম আসে তার কাছে মানুষ কেবলই সামান্য আশ্রয় খোঁজে, সর্বচ্ছ দিয়ে আকঁড়ে ধরে বাঁচতে চেষ্টা করে, এরচেয়ে কিছুই না।
প্রেমে আমি একবারই পড়েছি। তুমি চলে যাবার পর নতুন করে দ্বিতীয় আর কোন প্রেমের বৃষ্টি আমাকে ভিজাতে পারেনি। অনেকটা জীবনান্দের কবিতার বিখ্যাত সেই দু’টি লাইনের মতো “এই পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর। প্রেমের এমন পরিণতিতে প্রশ্ন থেকে যায় ‘বিচ্ছেদ কি শেষ সমাধান’?
Posted ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
bangladoinik.com | Belal Hossain
জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com