আনোয়ার হোসেন: | রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 71 বার পঠিত
কৃষিই সমৃদ্ধি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভিশন (রূপকল্প) “ফসলের টেকসই ও লাভজনক উৎপাদন ” বৃদ্ধি নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে দক্ষ, ফলপ্রসু, বিকেন্দ্রীকৃত এলাকা নির্ভর, চাহিদা ভিত্তিক এবং সমন্বিত কৃষি সম্প্রসারণ সেবা প্রদানের মাধ্যমে সকল শ্রেণির কৃষকদের প্রযুক্তি জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করণ” এর অংশ হিসেবে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষি জমিতে রাসায়নিক সারের মাত্রা কমিয়ে এনে কৃষকদের মধ্যে জৈব সার ব্যবহারের জন্য ভার্মী কম্পোষ্ট (কেঁচো সার) নামক সার উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহন করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার টেপামধ্যপাড়া গ্রামের ১৫ জন কৃষককে এ সার উৎপাদনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে। এখানে ৯০টি রিং এর মাধ্যমে প্রতি বছর ৩০ মেট্রিকটন ভার্মী কম্পোষ্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।
জানা গেছে, কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি একটি সহজ পদ্ধতি ১ মাসের বাসী গোবর দিয়ে ব্যবহার উপযোগী উৎকৃষ্ট জৈব সার তৈরি করা হয়। এ সার উৎপাদনের জন্য ১। ২ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া ও ১ মিটার গভীরতা বিশিষ্ট ইট দিয়ে চৌবাচ্চা তৈরি করতে হবে। চৌবাচ্চার উপর টিনের/খড়ের চালা দিতে হবে। ২। গর্তের মধ্যে বাসী পচা গোবর ঢেলে ভরে দিতে হবে। অতঃপর ২০০ থেকে ৩০০ কেঁচো ছেড়ে দিতে হবে। এ কেঁচোগুলো গোবর সারে মল ত্যাগ করবে। এই মলই কেঁচো সার। ৩। কেচোর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে সার তৈরীর সময় নির্ভর করে। সংখ্যা বেশী হলে দ্রুত কেঁচো সার তৈরি হবে। কেঁচো সার দেখতে চায়ের গুড়ার মত। ৪। সার তৈরি হওয়ার পর চৌবাচ্চা হতে সতর্কতার সাথে কম্পোস্ট তুলে চালুনি দিয়ে চালতে হবে। সার আলাদা করে কেঁচোগুলো পুনরায় কম্পোস্ট তৈরির কাজে ব্যবহার করতে হবে। ৫। কেঁচো সার বাজারের চাহিদা অনুযায়ী/ নিজস্ব ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সাইজের প্যাকেট/বস্তা ভর্তি করে রাখা যেতে পারে।
টেপামধ্যপাড়া গ্রামের কৃষাণী রেখা বেগম, শান্ত ও কল্পনা বেগম জানান, উৎপাদিত এসব জৈব সারের গুনগত মান অত্যন্ত ভাল। তাই এ এলাকা তথা উপজেলার কৃষকদের মধ্যে এই সারের ব্যবহার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অল্প খরচে বেশী লাভ আসায় এ সব সার নিজেদের জমিতে ব্যবহারের পাশাপাশি বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছি।
সাঘাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ সাদেকুজ্জামান জানান, সকল প্রকারের শাক সবজি ক্ষেতে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে শাক সবজির ফলন বাড়ানো যায়। ধান, গম, পাটসহ বিভিন্ন ফলবাগানে এই সার ব্যবহার করে ভাল ফলন পাওয়া যায়। এই সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে মাটিতে বায়ুচলাচল বৃদ্ধি পায়। মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ে, মাটির বিষাক্ততা দূরীভূত হয়। মাটির অনুজৈবিক কার্যাবলী বৃদ্ধি পায় ফলে মাটি হতে গাছ পুষ্টি পরিশোধন ক্ষমতা বেড়ে যায়। এই সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সার মাত্রার ১/২ অংশ ব্যবহার করলেই চলে। ধানের জমিতে বিঘাপ্রতি ৫০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে অর্ধেক ফলন পাওয়া যায়। এই সার পুকুরে ব্যবহার করে ফাইটোপ্লাংকটন উৎপাদন ত্বরান্বিত করে মাছের উৎপাদন বাড়ানো যায়।
চালুনীর সময় সাবধান থাকতে হবে যেন শিশু কেঁচো মারা না যায়। শিশু কেঁচোগুলো পুনরায় গর্তে রক্ষিত বাসী গোবরের মধ্যে কম্পোস্ট তৈরির জন্য ছেড়ে দিতে হবে। পিপঁড়া, উইপোকা, তেলাপোকা, মুরগী, ইঁদুর, পানি ও পোকার কামড় থেকে কেঁচোগুলোকে সাবধানে রাখতে হবে। প্রয়োজনে চৌবাচ্চার উপর মশারী ব্যবহার করতে হবে।
তিনি আরও জানান, আমরা এই সার উৎপাদন ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে সাঘাটা উপজেলার কৃষিতে রাসায়নিক সারের মাত্রা কমিয়ে এনে জৈব সার ব্যবহারে সারা জাগিয়ে কৃষিতে সমৃদ্ধি ঘটাতে চাই।
Posted ৯:২৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
bangladoinik.com | Belal Hossain
জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com