মুহাম্মদ কাইসার হামিদ | সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 12 বার পঠিত
অসুখে বিসুখে অসুস্থতায় মহান সৃষ্টিকর্তার পরেই মানুষ যাদের শরণাপন্ন হয় সেই মহান পেশার মানুষ হলো চিকিৎসক। তাই চিকিৎসকদের বলা হয়ে থাকে মানবসেবক। মানব সেবার ব্রত নিয়েই যারা নিজেদের আত্ম নিয়োগ করে এ পেশায় কাজ করে যারা সত্যিকার অর্থেই মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তারা মানুষের সেবা করতে পারলেই আনন্দ পান।
রোগীরাও তাদের আচার-ব্যবহারে আত্মতৃপ্তি পেয়ে অনেকটা সুস্থ হয়ে যান। চিকিৎসাসেবা একটি অনন্য শিল্প বা সেবা। একে প্রায়োগিকভাবে রপ্ত করতে হয়। জানতে হয় বিস্তর। আত্মস্থ করতে হয় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে। সব কাজের মধ্যে যেমন প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণি আছে, তেমনি চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যেও তাই।
সবকিছু ছাপিয়ে চিকিৎসকের উত্তম ব্যবহার, হাতের যশ, রোগ নির্ণয়, তার সঠিক চিকিৎসা প্রয়োগ, চিকিৎসার অনাবিল মুন্সিয়ানা হয়ে উঠে অনেকে । অনেক চিকিৎসক আছেন যাদের কোনো আবেগ ও হৃদয়ের ভাবাবেগ থাকে না। এ যেন রোবটিক ফাঁপা, নিষ্প্রাণ চিকিৎসার জন্য চিকিৎসা করা।
এ রকম চিকিৎসকদের সাধারণ মানুষ মোটেই পছন্দ করেন না। চিকিৎসা করতে হয় রোগের ধরন বুঝে আর বাস্তবতা দিয়ে। তাহলেই রোগ দূরীভূত হবে। সেই রকম একজন ভাল মানের ও ভাল মনের মানবিক চিকিৎসককে নিয়ে আজকের এ লিখা। যার আচাব ব্যবহারে ৩০% রোগ আল্লাহর রহমতে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
যার সম্পর্কে বলছিলাম তিনি হলেন, একজন “গরীবের বন্ধু” হিসেবে পরিচিত মানবসেবকের নাম ডা. মো. নিয়ামুল ইসলাম। ডা. মো. নিয়ামুল ইসলাম স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ঢাকা এর সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এর সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এরও আগে তিনি কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্জারী বিভাগে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর সেই সুবাদে এ উপজেলার আপামর জনতার সাথে গড়ে উঠে তার নিবিড় সম্পর্ক। কুলিয়ারচরের মানুষ তাকে এক নামে চেনেন।
তিনিও কুলিয়ারচরবাসীর ভালোবাসার টানে এমনকি গরীব, দুঃখী ও অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে এখনো ছুটে আসেন কুলিয়ারচরে। গরীব দুঃখী রোগীদের ভরসার নাম ডা. নিয়ামুল ইসলাম। তিনি আজও কুলিয়ারচরের মায়া ছাড়তে পারেননি তাই তিনি প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত কুলিয়ারচর বাজারস্থ “পপুলার মেডিকেল সেন্টার” নামক একটি বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে রোগী দেখতে চলে আসেন।
গত শুক্রবার সকালে সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের প্রচন্ড ভীড়। সবাই তাদের প্রিয় ডা. নিয়ামুল ইসলামের অপেক্ষায়। এ অবস্থা দেখে এবং কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, “পপুলার মেডিকেল সেন্টার” মানেই যেন ডাক্তার নিয়ামুল ইসলাম। তার নাম এ উপজেলার অনেকের মুখে মুখে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর যখন দেখলাম রোগীদের প্রিয় ডা. মো. নিয়ামুল ইসলাম পপুলার মেডিকেল সেন্টারে প্রবেশ করেছে তখন থেকেই রোগীদের মনে স্বস্তি এসেছে। শুরু হলো রোগী দেখা। এ অবস্থায় কারোর কাছ থেকে নামমাত্র ভিজিট নিয়ে আবার কারোর কাছ থেকে টাকা না নিয়ে তাদের যত্ন সহকারে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন।
গরীবের বন্ধু হিসেবে পরিচিত এই মানবসেবক দুনিয়া কাঁপানো মহামারী (কোভিড-১৯) করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে জীবন-মরণ বাজি রেখে ঝুঁকি নিয়েই কুলিয়ারচর উপজেলার অগনণিত মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছিলেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বেশ ক’জন রোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনি ভিজিট নিয়ে কখনো কোনো রোগীকে জুলুম করেননি।
সদাহাস্যজ্জল এই মানবসেবক গরীব রোগীদের ক্ষেত্রে বলতে শুনা যায়, ‘যান, ভিজিট লাগবেনা, আমার জন্য দোয়া করবেন’। গরীবদেরকে ভিজিট বিহীন বিনামূল্যে চিকিৎসার পাশাপাশি হতদরিদ্র রোগীদেরকে বিনামূল্যে ঔষধ (কোম্পানী কর্তৃক প্রদত্ত স্যাম্পল) প্রদান করতেও দেখা যায়।
পরীক্ষা নিরীক্ষার ক্ষেত্রে রোগীদেরকে বলেন, এই পরীক্ষাটা করাতে পারলে ভাল হত, না পারলে থাক পরে দেখা যাবে। এছাড়া আলেম উলামা, স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ মাদ্রাসার ছাত্র ও দ্বীনদার মানুষদের প্রতি অত্যন্ত সহানুভুতিশীল তিনি। ডা. নিয়ামুল ইসলাম প্রসঙ্গে কথা বলতেই উপস্থিত অনেক রোগীই বলেন, ডা. নিয়ামুল স্যারের মত অমায়িক, নম্র, ভদ্র ও পরোপকারী ডাক্তার আমরা কোথাও দেখিনি।
তিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে চিকিৎসা করেন। তার আচার-ব্যবহারেই রোগী অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেন। অনেককে ভিজিট ছাড়া ফোনের মাধ্যমেও চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন তিনি। অনেকেই বলেন, ডাক্তার নিয়ামুল স্যার একজন সৎ ও আদর্শবান ডাক্তার, তার ব্যবহার অত্যন্ত ভালো, তার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কুলিয়ারচর পৌর শহরসহ আশেপাশের অনেকের মুখেই শোনা যায় তার এমন সুনামের কথা।
ডা. নিয়ামুল ইসলাম শুধু রোগীদের সাথেই নয়, কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও বর্তমন কর্মস্থল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ঢাকা এর সমস্ত স্টাফদের সাথেও রয়েছে তার সু-সম্পর্ক। তিনি অত্যন্ত সুন্দর ব্যবহার ও হাস্যজ্জল চেহারার অধিকারী।
ডা. নিয়ামুল ইসলাম ১৯৭৬ সালের ১ জানুয়ারি রাজবাড়ী সদর উপজেলার বড়লক্ষীপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মো. আবদুর রহমান। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা ছিলেন। ডা. নিয়ামুল ইসলাম পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট।
শৈশব কৈশোর তার রাজবাড়ী সদর উপজেলার বড়লক্ষীপুর গ্রামেই কেটেছে। তিনি রাজবাড়ী থেকেই প্রাথমিক, এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ২০০১ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা বিষয়ে স্নাতক (এম.বি.বি.এস) ডিগ্রী অর্জন করেন। পরে ২৪ তম বি.সি.এস এর মাধ্যমে ২০০৫ সালে তার সরকারি চাকুরির হয়।
এরপর থেকে আর থেমে থাকেনি এই মানবসেবক। চিকিৎসা বিষয়ে একের পর এক ডিগ্রী অর্জন করতে থাকেন তিনি। তিনি ইতোমধ্যে যেসব ডিগ্রী অর্জন করেছেন এগুলোর মধ্যে স্বনামধন্য মেডিকেল তথা ঢাকা মেডিকেল থেকে তিনি এম.বি.বি.এস ডিগ্রী অর্জন করেন এবং বি.সি.পি.এস থেকে এফ.সি.পি.এস ডিগ্রী অর্জন করেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান লন্ডনের কয়েল কালা হইতে তিনি এম.আর.সি.এস ডিগ্রী অর্জন করেন, এছাড়াও তিনি এম.আর.সি. এস (এডিন), পি.এস.সি (শ্রীলংকা), ডি.এম.ইউ (বি.আই.এইচ.এস), বি.সি.এস (স্বাস্থ্য) ও সি.সি.ডি (বারডেম) ডিগ্রী অর্জন করেন।
উল্লেখ্য, গরীবের বন্ধু নামে পরিচিত মানবসেবক ডা. নিয়ামুল ইসলাম কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১২ সালের ৭ই মার্চ যোগদান করার পর একটানা ৭ বছর সার্জারী বিভাগের দায়িত্বে কর্মরত ছিলেন। তার কর্মদক্ষতা ও ব্যবহারে এই উপজেলার সকলে তাকে এক নামে চিনেন।
কুলিয়ারচরে থাকাকালীন সময় তিনি ৪ হাজারেরও বেশি গরীব-দুঃখী মানুষের অপারেশন করেছেন। হাওর অঞ্চলসহ আশপাশ এলাকার গরীব-দুঃখী মানুষের মধ্যে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে বেশ কয়েকবার তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্প করেছেন। গরীব-দুঃখী মানুষের চিকিৎসক ডাক্তার নিয়ামুল ইসলাম কুলিয়ারচরবাসীকে একটানা ৭ বছর স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার পর ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে চলে যান কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে।
ওখানে তিনি সহকারী অধ্যাপক (সার্জারী) হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ঢাকা এর সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্যক্তি জীবনে দুই পুত্র সন্তানের জনক। নিজেকে মানবসেবায় নিয়োজিত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন গরীবের বন্ধু ডা. মো. নিয়ামুল ইসলাম।
Posted ৩:১৫ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
bangladoinik.com | Belal Hossain
জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com