মঙ্গলবার ১৪ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

আওয়ামীলীগের পতনে সিআইএর হাত নাকি ৫ নেতার বাড়াবাড়ি ?

বিশেষ রিপোর্ট   |   মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   227 বার পঠিত

আওয়ামীলীগের পতনে সিআইএর হাত নাকি ৫ নেতার বাড়াবাড়ি ?

ড. মোহাম্মদ ইউনূস ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ কর্তৃক আয়োজিত রিসেপশনে বক্তব্য প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে যে আন্দোলন হয়েছে তা অত্যন্ত পরিকল্পিত, সূক্ষ্মভাবে ডিজাইন করা; এটি হঠাৎ করে আসেনি, বরং খুব যত্ন সহকারে নকশা করা হয়েছে।

এর আগে আমরা জেনেছি, ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ দ্য সানডে গার্ডিয়ান পত্রিকার মাধ্যমে যে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপসারণের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৯ সালের প্রথম দিক থেকে শুরু হয়েছিল। দ্য সানডে গার্ডিয়ান অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে লিখেছে যে এই পরিকল্পনায় কারা ফান্ডিং করেছে, কোন কোন সংস্থা এবং ব্যক্তি এর পেছনে ছিলেন এবং কারা এটি সমন্বয় করেছিলেন।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদদের মধ্যে যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছাকাছি ছিলেন—যেমন ওবায়দুল কাদের, হাসান মাহমুদ, আরাফাত, ড. সেলিম মাহমুদ, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া—এবং যারা ক্ষমতার শেষ সময়ে আওয়ামী লীগের ঝামুকূটনৈতিক হিসেবে ড. গওহর রিজভী এবং ড. জামিরদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ রাখতেন, তাদের গতিবিধি বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই নেতারা আন্দোলনের আগে এবং পরে কোথায় ছিলেন, কীভাবে তারা সরকারের বিপক্ষে এবং পক্ষে ভূমিকা রেখেছিলেন, তা বিশ্লেষণ করলেই একটি নির্দিষ্ট চিত্র পাওয়া যেতে পারে। উল্লেখযোগ্যভাবে, তারা সবাই বর্তমানে নিরাপদে অবস্থান করছেন—যেমন ওবায়দুল কাদের সিঙ্গাপুরে, হাসান মাহমুদ বেলজিয়ামে, আরাফাত যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাক্টেতে, ড. সেলিম মাহমুদ পারটেক্স গ্রুপের হেফাজতে থেকে এখন ভারতে এবং ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ভারতে থেকে এখন যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে অবস্থান করছেন।

এই সব নেতাদের গতিবিধি এবং বিদেশে অবস্থানের কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যেতে পারে, যে তারা সিআইএর পক্ষে কাজ করছিলেন কিনা বা তারা কোনোভাবে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন কিনা। এই তথ্যগুলো আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে। ঢাকা শহরে বিপ্লব বড়ুয়ার আগমন ৯৩ সালের শেষের দিকে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী নির্বাচিত হওয়ার পর। এলাকার বড় ভাই মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীর সহায়তায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে প্রিলিমিনারিতে (পিলু নামে পরিচিত) ভর্তি নেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীর ব্যক্তিগত ব্যাগ বাহক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এই বড়ুয়া। ছাত্রলীগের সভাপতির ব্যাগ বহন ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে কেউ দেখাতে পারবে না সেই সময়টাতে, কোনো মিছিলে বড়ুয়ার উপস্থিতির সাক্ষী কেউ হতে পারেনি এই ঢাকা শহরে।

মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীকে দক্ষতার সাথে ব্যবহার করেন বড়ুয়া: অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই মঈনুদ্দিন হাসানকে ব্যবহার করে দৈনিক মুক্তকণ্ঠে চাকরির ব্যবস্থা করেন। ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও অবৈধভাবে জগন্নাথ হলে থেকে চাকরি চালিয়ে যান ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মঈনুদ্দিন হাসানকে ব্যবহার করে বিপ্লব বড়ুয়া বিটিভিতে প্রযোজক হিসেবে চাকরি বাগিয়ে নেন এবং ২০০১ সাল পর্যন্ত আজিজ কো-অপারেটিভে মাসে থেকে চাকরি অব্যাহত রাখেন। এই সময়ের মধ্যে বড়ুয়া তৎকালীন বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেনের কাছ থেকে মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীর সহায়তায় তার স্ত্রী সোমা বড়ুয়াকে বিমানের এয়ার হোস্টেসের চাকরির ব্যবস্থা করেন। এটি ছিল ৯৩ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিপ্লব বড়ুয়ার দল, ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের প্রতি অবদান ও অর্জন।

২৬শে সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসের বক্তব্য এবং দ্য সানডে গার্ডিয়ানের রিপোর্ট একে অপরকে সমর্থন করছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই সূক্ষ্মভাবে তৈরি আন্দোলন আসলে কারা পরিচালনা করেছিল—বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা নাকি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা? শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার আন্দোলনে দেশে-বিদেশে অনেক সংস্থা, পেশাজীবী, ব্যবসায়িক সংগঠনসহ অসংখ্য মানুষের সম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা যায়। এই বিপুল শ্রেণির পেশাজীবী মানুষদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা এত অল্প সময়ে কি সূক্ষ্মভাবে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিল এবং আন্দোলন সফলভাবে সম্পন্ন করার ক্ষমতা রাখে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আসলে এই আন্দোলনের সূক্ষ্ম কারিগরি পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। সিআইএ শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার জন্য শুধুমাত্র হাসিনা বিরোধীদের সংগঠিত করেছিল নাকি শেখ হাসিনার পক্ষের লোকদের, যারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন, তাদেরও সংগঠিত করে হাসিনার বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছিল—এমন প্রশ্ন উঠেছে। এর অর্থ হলো, এই আন্দোলনের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে আরও জটিল ও সূক্ষ্ম কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে হাসিনার ঘনিষ্ঠ মহলেও প্রভাব বিস্তার করা যেতে পারে। শেখ হাসিনা সরকারের সামরিক বাহিনী, আমলা, ব্যবসায়ী, পুলিশ বাহিনী এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে কারা কারা সিআইএর সাথে এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে, তা জানা আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত জরুরি, যদি তারা আবার রাজনীতির মাঠে ফিরে আসতে চায়। এই ধরনের তথ্য আওয়ামী লীগের কৌশল নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, আমলা, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে যারা গত এক বছরে আমেরিকা এবং সিঙ্গাপুর সফর করেছেন, তাদের আন্দোলনে ভূমিকা এবং তারা সরকারের পাশে থেকে কিভাবে আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছেন তা বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত জরুরি। আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে তাদের নিরাপদ প্রস্থানের পরিকল্পনা নিয়েও বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এই ব্যক্তিদের কার্যক্রম, সফর এবং সম্পর্কগুলি সতর্কভাবে বিশ্লেষণ করলেই একটি নির্দিষ্ট চিত্র পাওয়া সম্ভব হতে পারে।

এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, এই প্রধান ব্যক্তিরা কি শুধুমাত্র অর্থের জন্য সিআইএর পক্ষে কাজ করেছিলেন নাকি তারা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন। এই বিশ্লেষণ করতে পারলে আওয়ামী লীগ সঠিক কৌশল নির্ধারণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে।
২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিপ্লব বড়ুয়া: বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর বিপ্লব বড়ুয়া স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডন চলে যান। লন্ডনে অবস্থানকালে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির সহায়তায় ভেকটন টেলিভিশনে কাজ জোগাড় করে নেন। মাসুদা ভাট্টি তখন সদ্য বিবিসি ছেড়ে ভেকটনের বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছিলেন। ১/১১ এর পর দুই নেত্রীকে মাইনাস করার যে ফর্মুলা নিয়ে সংস্কার কর্মসূচি শুরু করে তৎকালীন সরকার, সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নে মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আমসা আমিনের নেতৃত্বে একটি টিম লন্ডন যায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমর্থন ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য। বিপ্লব বড়ুয়া মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আমসা আমিনের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে লন্ডনের বাংলা ইলেকট্রিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় সংস্কারক এই টিমকে সুযোগ করে দেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ছোট ছোট ইনডোর মিটিংয়ের আয়োজন করেন। এই নিয়ে মাসুদা ভাট্টির সাথে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় এবং বিপ্লব বড়ুয়া চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনের অল্প কিছুদিন আগে ঢাকা চলে আসেন। এটাই ছিল লন্ডনে অবস্থানকালে আওয়ামী লীগের জন্য বিপ্লব বড়ুয়ার অবদান।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে বিপ্লব বড়ুয়ার উত্থান: বিএনপি-জামাত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর সাংবাদিক সাবান মাহমুদসহ বেশ কিছু সাংবাদিককে আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে বিটিভি থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর, সাবান মাহমুদের নেতৃত্বে তারা আবারও চাকরিতে পুনর্বহাল হন এবং দীর্ঘদিনের বকেয়া বেতন আদায় করেন। বিপ্লব বড়ুয়া এই তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বেতনসহ টাকা দাবি করেন, বিপ্লব বড়ুয়া কোটি টাকার উপরে বকেয়া বেতন আদায় করেন, যদিও তিনি সেই সময়ে লন্ডনে স্টুডেন্ট ভিসায় অবস্থান করছিলেন এবং ভেকটন টেলিভিশনে চাকরি করছিলেন। এই দাবি ও বকেয়া আদায় নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন ও আলোচনা সৃষ্টি হয়, কারণ তার অবস্থান ও চাকরির প্রেক্ষাপটে এই অর্থ আদায় করা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ ছিল। ২০১০ সাল থেকে বিপ্লব বড়ুয়া আইন পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন, কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারেন যে এই চ্যালেঞ্জিং পেশায় তিনি টিকে থাকতে পারবেন না। লন্ডনে ব্রিটিশ আইন ডিগ্রি অর্জন করে বার-এট-ল খেলেও বাংলাদেশের আইনের উপর পর্যাপ্ত একাডেমিক ডিগ্রি এবং অভিজ্ঞতা না থাকায় এই পেশায় তার জন্য সফল হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সাংবাদিকতাতেও তার ডিগ্রির মান ছিল খুবই নিম্নমানের। উচ্চাকাঙ্ক্ষী বড়ুয়া এই পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে পড়েন এবং যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এই সময়ে তিনি তার বিমানের এয়ার হোস্টেস স্ত্রীকে ভিজিট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান এবং সেখানে তাদের সন্তানের জন্মের ব্যবস্থা করেন, যাতে সন্তান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পায়। একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর প্রচুর অর্থ না থাকলে সেখানে স্থায়ী হওয়া কঠিন হতে পারে এই চিন্তা মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে তিনি ২০১২ সাল থেকে রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার চেষ্টা শুরু করেন।
আওয়ামী লীগে ঢুকার পথ খুঁজে, এইচ টি ইমাম এবং দিলীপ বড়ুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ার চেষ্টা করা এবং সফল হওয়া:
বিপ্লব বড়ুয়া আওয়ামী লীগে প্রবেশের পথ খুঁজতে গিয়ে এইচ টি ইমাম এবং দিলীপ বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠতার দিকে মনোযোগ দেন। তিনি কোনো প্রচলিত রাজনৈতিক পথ অনুসরণ না করে, শেখ হাসিনার কাছাকাছি যাওয়ার জন্য এইচ টি ইমামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন।

এইচ টি ইমামের দুর্বলতা খুঁজে পেয়ে, বিপ্লব বড়ুয়া তার সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন এবং অল্প সময়ের মধ্যে তার প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এই সম্পর্কের মাধ্যমে বিপ্লব বড়ুয়া আওয়ামী লীগে প্রবেশের সুযোগ পান এবং পরবর্তীতে দলের মধ্যে তার রাজনৈতিক অবস্থান দৃঢ় হয়।
এইচ টি ইমাম এবং তৎকালীন ডিজি এসএসএফ মেজর জেনারেল আবেদিনের সহায়তায় তিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে পৌঁছানোর সুযোগ পান। পরবর্তীতে এই ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে বিপ্লব বড়ুয়ার রাজনৈতিক উত্থান সবার সামনে আসে এবং তার পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাত্র তিন বছরের প্রচেষ্টায় তিনি জীবনের প্রথম দলীয় পদ হিসেবে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক পদ অর্জন করেন।
আওয়ামী লীগের সরকার পতনে and সিআইএ’র পরিকল্পনায় বিপ্লব বড়ুয়া যুক্ত:
ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বয়স প্রায় ৩০ বছরের মতো। বিপ্লব বড়ুয়া আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার বহু আগে থেকেই তাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিপ্লব বড়ুয়া যখন একজন সাংবাদিক এবং বিটিভির প্রযোজক ছিলেন, তখন ড. মোহাম্মদ ইউনুসের ভাই মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ইউনুসের সহায়তায় ইউনুসের সঙ্গে বিপ্লব বড়ুয়ার পরিবারের সম্পর্ক তৈরি হয়। সাংবাদিক হিসেবে এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের বাসিন্দা হিসেবে সেই সময়ে বিপ্লব বড়ুয়া ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে মিডিয়া কাভারেজের ব্যবস্থা করতেন। উল্লেখ্য, ১/১১ এর সময় সংস্কার কার্যক্রম জনসমক্ষে এবং বেগবান করতে মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আমসা আমিনের নেতৃত্বে যে টিম লন্ডনে গিয়েছিল, সেই টিম যেন বিপ্লব বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করে। এই প্রস্তাব ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ইউনুসের ছিল, কারণ তৎকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ড. ইউনুস পরিবারের প্রচণ্ড প্রভাব ছিল। বিপ্লব বড়ুয়া লন্ডন থেকে ফিরে আসার পর ২০০৮ সালে ড. মোহাম্মদ ইউনুসের ভাই মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ইউনুস শান্তিনগর এলাকায় তার বাড়ির পাশে বিপ্লব বড়ুয়ার জন্য একটি বাড়ি ভাড়া করে দেন। বিপ্লব বড়ুয়ার বাড়িতে যারা সেই সময় ছিলেন, তারা ড্রইং রুমে ড. ইউনুসের সঙ্গে তার পরিবারের শুভেচ্ছা জানাতে ছবি তুলেন, যা একটি ফটো ফ্রেমে বাঁধা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে ড. মোহাম্মদ ইউনুসের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর এই ছবিটি ড্রইং রুম থেকে নামিয়ে ফেলা হয়।
বিপ্লব বড়ুয়া পরিবারের জন্য ড. মোহাম্মদ ইউনুসের অবদান:
বিপ্লব বড়ুয়ার স্ত্রী ভিজিট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং সেখানে সন্তানের জন্ম দেন।

হাসপাতালে বিমা না থাকায় বিল খুব বেশি হয়ে যায়। বিল পরিশোধের সক্ষমতা না থাকায় ড. ইউনুসের সাহায্য নেন এবং ড. ইউনুস একটি দাতব্য সংস্থা পরিচালনা করে বিপ্লব বড়ুয়ার বিল পরিশোধের জন্য সহায়তা করেন। বিপ্লব বড়ুয়ার শ্যালিকা এবং তার স্বামী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোপনীয় এবং সংবেদনশীল সংস্থায় চাকরি পাওয়ার জন্য ড. মোহাম্মদ ইউনুস এই দম্পতির জন্য সুপারিশ করেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিপ্লব বড়ুয়া অবৈধ পথে ভারত চলে যান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিপ্লব বড়ুয়ার যুক্তরাজ্য এবং কানাডার ভিসা বাতিল হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হওয়াটাও খুব স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু বিপ্লব বড়ুয়া ড. মোহাম্মদ ইউনুসের সুপারিশে অবৈধ পথে ভারতে যাওয়ার পরেও যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। বর্তমানে বিপ্লব বড়ুয়া তার স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করছেন, তার যুক্তরাষ্ট্রে সম্পত্তি এবং অন্যান্য বিষয়গুলো ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রসঙ্গগুলো উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে বিপ্লব বড়ুয়ার সঙ্গে ড. মোহাম্মদ ইউনুসের ৩০ বছরের গভীর সম্পর্ক বোঝানো। এই সম্পর্কের গভীরতার কারণেই বড়ুয়া সিআইএ-এর কার্যক্রমে যুক্ত হন এবং মি. ওবায়দুল কাদের, আরাফাত, ড. সেলিম মাহমুদকে এতে সম্পৃক্ত করেন এবং সিআইএ-এর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন। ধীরে ধীরে, পূর্বে যারা আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্র নীতি ও সম্পর্ক রক্ষা করতেন যেমন গওহর রিজভী এবং ড. জমির, তাদেরকে বাদ দিয়ে দেন এবং শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পথকে সুগম করেন। বিপ্লব বড়ুয়া, চায়না দূতাবাসে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য দিলীপ বড়ুয়ার সহযোগিতা নেন। এরপর থেকে তিনি চায়না দূতাবাসের গোপন তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করেন এবং চীনা ব্যবসায়ীদের সাথে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সংযোগ ঘটিয়ে কমিশনের ব্যবসা করেন।

এইভাবেই বিপ্লব বড়ুয়া আজকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম নীতিনির্ধারক হয়ে উঠেছেন।
বিপ্লব বড়ুয়া মূলত ক্ষমতার রাজনীতির সৃষ্টি। পেশাগত জীবনে ব্যর্থ হয়ে পরিকল্পিতভাবে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতিকে বেছে নিয়েছেন। রাজনৈতিক কমিটমেন্ট এবং অবদান না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নীতিনির্ধারক হয়ে, দলের অভ্যন্তরীণ তথ্য পাচার করে, আওয়ামী লীগকে দুর্বল করে এই হাইব্রিড নেতা আজকে কোটি কোটি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মৃত্যুর মুখে ফেলে দিয়েছেন। সম্প্রতি “খবরের কাগজ” নামক দৈনিক পত্রিকায় বিপ্লব বড়ুয়া এবং তার ভাই বিদ্যুৎ বড়ুয়ার নানা অপকর্মের অনুসন্ধানী তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, চট্টগ্রামের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ, নারী কেলেঙ্কারি, রাজাকার পিতার নামে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তরা এলাকায় প্লট সংগ্রহ, চট্টগ্রামে অসংখ্য ফ্ল্যাট এবং বাড়ি, ধানমন্ডিতে ৫ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, লন্ডনে শ্যালক অভি বড়ুয়ার সহযোগিতায় একাধিক বাড়ি, আমেরিকার ডালাসে একাধিক বাড়ি। চট্টগ্রামে ব্যারিস্টার নওফেল এবং এস আলম গ্রুপের সাথে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি দখল, ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাবসহ ঢাকার সকল অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ ক্রয়, লন্ডনের বিখ্যাত বোর্ডিং স্কুলে প্রতি সেমিস্টারে কোটি টাকার উপরে টিউশন ফি দিয়ে মেয়েকে ভর্তি করানো। নিয়মিত প্র্যাকটিসিং আইনজীবী না হয়েও দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবে মাসিক সম্মানী গ্রহণ করে হাজার কোটি টাকার মালিক, এছাড়াও এস আলম গ্রুপসহ সকল ব্যাংক খেকো ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটে বিপ্লব বড়ুয়ার সম্পৃক্ততা রয়েছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ মনে করেন, সম্প্রতি বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে, যে সকল ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, হাইব্রিড রাজনীতিক, দুর্নীতিবাজদের কারণে আজকের আওয়ামী লীগ, জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং কোটি কোটি নেতা-কর্মীর এই দুর্দশা, তাদের সম্পর্কে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে দল থেকে। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ এবং মধ্যবিত্তদের আওয়ামী লীগ আজকে বন্দি ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ, সেলিব্রিটি, পরিবর্তনতন্ত্রী, হাইব্রিড এবং আমাদের হাতে। গণমানুষের এই দলটিকে গণমানুষের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার মতো হাইব্রিডদের বিচার দিয়ে শুরু করতে হবে। এরা নারীলোভী, অর্থলোভী, ক্ষমতালোভী, এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে, এদের উত্থানে হাজার হাজার ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে আওয়ামী লীগ বিমুখ করেছে। শুরু করতে হবে অতি দ্রুত, হাজার হাজার নেতা-কর্মী রাস্তায় নামতে প্রস্তুত, এরা বিভ্রান্তিতে ভুগছে, এদের রক্ত-ঘামের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ আবার ঘুরে দাঁড়ালে দুর্বৃত্তরা কি আবার আওয়ামী লীগকে গিলে খাবে? নেতা-কর্মীরা নিশ্চয়তা চায় জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে।আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বিশ্বাস করে, নেত্রী যদি নিশ্চয়তা দেন এবং পদক্ষেপ নেন তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা আবার ঘুরে দাঁড়াবেন।

Facebook Comments Box

Posted ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

bangladoinik.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com

এ বিভাগের আরও খবর

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক
ফখরুল ইসলাম
সহসম্পাদক
মো: মাজহারুল ইসলাম
Address

2nd floor, Opposite building of Muradnagar Thana gate, Muradnagar-3540, Bangladesh

01941702035, 01917142520

bangladoinik@gmail.com

জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com