বিশেষ রিপোর্ট | বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪ | প্রিন্ট | 575 বার পঠিত
সম্প্রতি ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন, শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ, আওয়ামী লীগের সকল এমপি, মন্ত্রী, মেয়র, চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় নেতা এবং জেলা পর্যায়ের নেতাদের আত্মগোপন ও দেশ ত্যাগ, পাশাপাশি ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাষ্ট্র পরিচালনা—সার্বিক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সচেতন মানুষ, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, আইনজীবী সহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ, আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং আওয়ামী-বিরোধী সবার মনে যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে, “আওয়ামী লীগ কি আবার রাজনীতির ময়দানে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? যদি ঘুরে দাঁড়াতে হয়, তবে তা কি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে? নাকি শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে অন্য কেউ?”
আজকের লেখাতে উপরের প্রশ্নের সমাধানে আমরা একটি বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা তুলে ধরার চেষ্টা করি। ৫ই আগস্ট সরকারের পতনের পর একটি রিট দায়ের হয়েছিল হাইকোর্টে আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের জন্য। ২৭শে আগস্ট শুনানির পরে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মিডিয়ার সামনে একটি ব্রিফিং দিয়েছিলেন এবং তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা ও কর্তৃত্ববাদী সরকার কিছু জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল, তা সবার জানা। কোনো ব্যক্তির দোষের জন্য কোনো রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে না। ব্যক্তিগত অপরাধগুলো দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হবে।” তিনি আরও বলেন, “দেশে লাখো লাখো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী আছেন যারা হালুয়া-রুটির ভাগাভাগিতে ছিলেন না। অনেক নেতা-কর্মী আছেন যারা হালুয়া-রুটির জন্য চেষ্টা পর্যন্ত করেননি। তারা চাইলে দলের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে পারেন।”
এর আগে ১২ই আগস্ট ব্রিগেডিয়ার শাখাওয়াত হোসেন (অবঃ) আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বলেন, “প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা করবেন না, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না, পরিণতি ভালো হবে না। তবে আওয়ামী লীগ দল হিসেবে পুনর্গঠন করতে পারেন, এতে কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশের মানুষ এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়।” তিনি আরও বলেন, “দেশের জন্য আওয়ামী লীগের অনেক অবদান আছে। তাই তারা দল গোছাতে পারে, আওয়ামী লীগের অবদান আমরা অস্বীকার করতে পারি না।”
বতর্মান সময়ে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ ড. মুহাম্মদ ইউনুস সরকার-এর দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বক্তব্য যদি পর্যালোচনা করা হয়, দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের চরম প্রতিপক্ষও মনে করেন, আওয়ামী লীগের লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী রয়েছেন, যারা দুর্নীতিমুক্ত, হালুয়া-রুটি ভাগে অংশ নেননি, দেশের জন্য আওয়ামী লীগের অবদান রয়েছে। আওয়ামী লীগ সহজেই দল হিসেবে পুনর্গঠন করতে পারেন এবং আগামীর জন্য প্রস্তুত হতে পারেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, সরকার বা দল একটি ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সকল সদস্য, এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা পর্যায়ের নেতা, মেয়র, চেয়ারম্যানরা পালিয়ে গেছেন, আত্মগোপনে আছেন, সেই দলকে সুসংগঠিত করে নতুন করে তৈরি করা কি সত্যিই সহজ হবে কি? পুনর্গঠন করতে হলে কী কী বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে, এই পুনর্গঠনের নেতৃত্ব আসলে কাকে দিতে পারে? বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কোন ধরনের নেতৃত্ব গ্রহণযোগ্য মনে করেন?
সার্বিক বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে কিছু প্রাসঙ্গিক পর্যালোচনা করা যাক:
আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ স্বীকার করুন বা না করুন, এই সত্য মেনে নিতে হবে যে, বাংলাদেশের একটি প্রজন্মের কাছে আওয়ামী লীগ একটি ঘৃণিত নাম। একটি সফল ছাত্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সরকারকে বিদায় নিতে হয়েছে, একটি সরকার বা রাজনৈতিক দল সম্প্রতি বৃহৎ ছাত্র গণআন্দোলনে ক্ষমতা হারিয়েছে। তাদের জন্য আবার রাজনীতিতে ফিরে আসা এবং নিজেদের পুনর্গঠন করা একটি কঠিন কাজ হলেও অসম্ভব নয়। তবে ফিরে আসার জন্য কিছু পদক্ষেপ আওয়ামী লীগকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।
একটি সরকার বা রাজনৈতিক দল যেটি সম্প্রতি একটি বৃহৎ আন্দোলনের দ্বারা ক্ষমতা হারিয়েছে, তাদের জন্য আবার রাজনীতিতে ফিরে আসা এবং নিজেদের সংস্কার করা একটি কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। তাদের ফিরে আসার এবং নিজেদের পুনর্গঠন করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারে:
১.পূর্বের ভুলগুলো স্বীকার করা, ২.নেতৃত্ব পরিবর্তন, ৩. আদর্শ ও নীতিতে সংস্কার আনা, ৪. তৃণমূলের সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপন, ৫. স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ, ৬. কার্যকর যোগাযোগ কৌশল, ৭. জোট ও সহযোগিতা করা, ৮. স্থানীয় নির্বাচন ও নাগরিক অংশগ্রহণে মনোযোগ, ৯. সংস্কারকে সমর্থন করা, ১০. ভবিষ্যতের জন্য একটি ভিশন তৈরি করা,১১.বিরোধী দলের ভূমিকাকে কাজে লাগানো, ১২. আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকরা.
প্রথমত: আওয়ামী লীগকে তাদের ভুলগুলো চিহ্নিত করতে হবে, যে ভুলগুলোর কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সম্পর্কে এবং এই দলের নেতা-নেত্রী সম্পর্কে মানুষের ঘৃণার জন্ম হয়েছে। এই ভুলগুলো চিহ্নিত করতে হলে আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রী, কর্মী ও সমর্থকদের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিবেচনা না করে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভুলগুলো চিহ্নিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এবারের আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে সাধারণ মানুষ, আওয়ামী লীগের ভেতরের মানুষ, ধর্মপ্রাণ মানুষ, শ্রমিক এমনকি প্রান্তিক পর্যায়ের আওয়ামী লীগের ত্যাগী এবং বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের সমর্থন ছিল। তাই সর্বস্তরের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভুলগুলো চিহ্নিত করে স্বীকার করতে হবে, এবং তা করতে হবে জনসমক্ষে। কর্মসূচি সাজাতে হবে ভুলগুলোকে মাথায় রেখে, যাতে মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মায় যে আওয়ামী লীগ সত্যিকারের একটি পরিবর্তন, সংস্কার এবং পুনর্গঠন করতে যাচ্ছে।
এই বিষয়গুলো বিবেচনায় না নিয়ে যদি আওয়ামী লীগ বন্ধুদেশের সহযোগিতা, আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফল, আন্তর্জাতিক এবং ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপট মাথায় নিয়ে পুনরায় ফিরে আসতে চায়, তাহলে আমার বিশ্বাস গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলো আবার ঐক্যবদ্ধ হবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। মনে রাখতে হবে সরকার এবং দলের হাতে সমস্ত ক্ষমতা থাকার পরেও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় নিতে হয়েছে। এখন ক্ষমতার বাইরে দল, দলের ব্যাপক একটা অংশ সুবিধাভোগী, কালোটাকার মালিক, নিরাপদে দেশের বাইরে অবস্থান করছে, প্রতিনিয়ত নিজের অর্থ ও সম্পদ রক্ষায় ব্যস্ত, দলকে সুসংগঠিত করা এবং নেত্রীকে শক্তিশালী করার বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার সময় তাদের নেই। তাই ভুলগুলো চিহ্নিত করে প্রকাশ্যে স্বীকার করে দলকে পুনর্গঠন করে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হওয়া একটি পদক্ষেপ হতে পারে।
যে ভুলগুলোকে প্রকাশ্যে স্বীকার করে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া যেতে পারে, তার অন্যতম হলো: নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করা। যা আওয়ামী লীগ করেছে, তা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি, কোনো যুক্তিতেই এটি বৈধতা পেতে পারে না। বঙ্গবন্ধু তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো জেলে কাটিয়েছেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, এবং জননেত্রী নিজেও অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন গণতন্ত্রের জন্য। স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায়, জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও, তার শাসনামলেই বাংলাদেশের সকল স্তরের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মেয়র নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, জেলা পরিষদ নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ সকল পেশাজীবী সংগঠনের নির্বাচন, স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচন—এমন কোনো নির্বাচন নেই যা আওয়ামী লীগের শাসনামলে ধ্বংস হয়নি। কী লাভ হয়েছে নেত্রী এবং আওয়ামী লীগের এই সব ‘বিনা ভোটের’ নেতা বানিয়ে? আজকের দেশের, দলের এবং নেত্রীর দুঃসময়ে কেউ নেই দাঁড়ানোর মতো। তাই এই ভুল যেকোনো পর্যায়ে স্বীকার করে আওয়ামী লীগকে অগ্রসর হতে হবে, তা না হলে নতুন এই প্রজন্মের কাছে সবসময়েই ঘৃণিত থাকতে হবে।
এরকম অনেক ভুল রয়েছে যা সনাক্ত করে প্রকাশ্যে স্বীকার করতে হবে এবং সমাধানে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। দলের নেতাদের উচিত এই ভুলগুলো চিহ্নিত করে জনগণের সামনে তা খোলাখুলিভাবে স্বীকার করা, এবং এরপর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাতে দল ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়। এই ভুলগুলো শুধরে না নিলে নতুন প্রজন্মের কাছে আওয়ামী লীগকে সবসময়ই সমালোচিত ও অগ্রহণযোগ্য হয়ে থাকতে হবে।
আরও একটি পদক্ষেপ হচ্ছে, দলের অভ্যন্তরীণ ভুলগুলো স্বীকার করা, পর্যালোচনা করা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দলের ভেতরে যেসব ভুল হয়েছে, সেগুলো সৎভাবে চিহ্নিত করে তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দলকে তার নেতাদের কাজ এবং সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা করতে হবে। এরপর সেই ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে দলের অভ্যন্তরীণ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।
এই ভুলগুলো কার কাছে স্বীকার করতে হবে এবং কার আস্থা অর্জনের জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে? এই শ্রেণিটি আসলে কারা?
প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে এই শ্রেণিটি কারা। এই শ্রেণিটি হলো দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের এবং বংশপরম্পরায় আওয়ামী পরিবার থেকে আসা মানুষ। তারা কখনো ক্ষমতার হালুয়া-রুটির আশায় দলকে ভালোবাসেনি, কখনো হালুয়া-রুটির জন্য দৌড়ঝাঁপ দেয়নি। তারা দলের আদর্শ ও নীতিকে ভালোবাসে। তারা চায় যে দলের নেতা-নেত্রী এবং কর্মসূচি যেন বুক ফুলিয়ে চায়ের টেবিলে, আড্ডায়, গল্পে নিজেদের দলকে গর্বের সাথে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।
যদি নেতা-নেত্রী দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, অনৈতিক চরিত্রের অধিকারী হয়, বা ক্ষমতার অপব্যবহারকারী হয়, তখন তারা আঘাত পায়, ভেঙে পড়ে, হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, নীরবে কাঁদে দলের জন্য, অভিমানী হয়, কিন্তু কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করে না।
দলের সংস্কার বা পুনর্গঠনের জন্য আগে সেই শ্রেণিটিকে সঠিকভাবে চিনতে হবে। বছরের পর বছর তাদের
ভেতরে জমে থাকা ভুলগুলোকে আবিষ্কার করতে হবে, ভুলগুলো চিহ্নিত করে পরিবর্তনের চেষ্টা, প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। যে সমস্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে এই পর্যায়ে কাজ করতে হবে তা হলো:
প্রথমত, নেত্রীকে তার আত্মীয়-স্বজনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে হবে এবং মনের মধ্যে সঠিকভাবে তা ধারণ করতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মনে করেন যে কোনো এলাকায় নেত্রীর কোনো আত্মীয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে নেত্রী তা স্বাভাবিকভাবে নেন না এবং অভিযোগকারীr আজীবনের জন্য রাজনীতি করার পথ বন্ধ হয়ে যায়। নেত্রীর আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি সারা দেশের মানুষ এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। খুলনা, বরিশাল, বৃহত্তর ফরিদপুর এবং ঢাকা সহ যেখানেই নেত্রীর আত্মীয়-স্বজন আছেন, তারা সবাই মহারাজার ভূমিকায় আছেন, দলের নেতা-কর্মীরা ন্যূনতম মর্যাদা এবং সম্মান তাদের কাছ থেকে পান না। এরা সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত, কোটি কোটি টাকার মালিক। নেতা-কর্মীরা মনে করেন, এই আত্মীয়-স্বজনেরা নেত্রীর পরিচয়ে এই অপরাধগুলো করছেন, আর নেত্রী যেন না জানার ভান করছেন।
নেতা-কর্মীরা মনে করেন, এই আত্মীয়-স্বজনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অত্যাচারের কারণেই 5th আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির প্রতি যে অবমাননা হয়েছিল, তার অন্যতম কারণ। রাজনৈতিকভাবে আমরা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা বলবো, কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে চরম সত্যটি উপলব্ধি করে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বক্তব্য রাখতে হবে।
এই পদক্ষেপটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দলের সংস্কার বা পুনর্গঠনের জন্য অভ্যন্তরীণ ভুলগুলো স্বীকার এবং সমাধান করাই একমাত্র উপায়। আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলের ক্ষেত্রে, নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ এবং অসন্তোষের মূল কারণগুলোর মধ্যে নেত্রীর আত্মীয়-স্বজনের দুর্নীতি ও অপব্যবহার নিয়ে তাদের হতাশা অন্যতম।
প্রথমেই নেত্রীকে এই বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে এবং দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের কাছে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি নিজের আত্মীয়-স্বজনদের অন্যায়কে সমর্থন করেন না। সেই সঙ্গে, এই বিষয়গুলো নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে যাতে দলের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট মোকাবিলা করে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়।
পরিবারতন্ত্র এবং আত্মীয়-স্বজনের প্রভাবমুক্ত একটি রাজনীতি গড়ে তোলার জন্য দলকে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তা কেবল নেত্রীর সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমেই সম্ভব। দলের নেতা-কর্মীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং দলের গৌরব পুনরুদ্ধার করতে এই পদক্ষেপগুলো অপরিহার্য।
দ্বিতীয়ত: জেলা ভিত্তিক পরিবারতন্ত্র বিলুপ্ত করতে হবে। নেতার ছেলে-মেয়ে বা পরিবারের সদস্যদের নেতা-নেত্রী করার এই ফর্মুলা ব্যাপকভাবে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যখন দল ক্ষমতায় থাকে, তখন এই সমস্যার ক্ষতিকর প্রভাব বুঝা না গেলেও, ক্ষমতা হারানোর পর পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুভব করা যায়। প্রায় প্রতিটি জেলায় পরিবারগুলো তাদের নিজস্ব জমিদারি প্রথা চালু করেছে, যেখানে দলের নেতা-কর্মীরা তাদের কাছে কদরবিহীন প্রজা হিসেবে গণ্য হয়। নিজেদের পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারা তাবেদার বাহিনী সৃষ্টি করেছে এবং অন্যায়, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি পোষণ করে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তাদের কারণে দলের নেতা-কর্মীরা দল থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছে। এই সমস্ত পরিবারতান্ত্রিক কুটনীতি এবং নেতাদের বিরুদ্ধে সংস্কার আনতে হবে।
পরিবারতন্ত্রের ব্যর্থতার প্রকৃত উদাহরণ গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা। শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল—শিল্পাঞ্চলে একটি মিছিল বের করতে পারেননি দলের এবং দেশের দুঃসময়ে। তার পরিবার এবং চাচার দুর্নীতির যে কাহিনি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে, তা সত্যিই দলের ভাবমূর্তির জন্য উদ্বেগজনক। শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাব এবং শারীরিকভাবে অযোগ্য থাকা সত্ত্বেও ঢাকার পাশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তাকে নেতা বানিয়ে দলের ভয়ানক ক্ষতি করা হয়েছে। টঙ্গী গাজীপুর থেকে যে মিছিল উত্তরা তে যোগ দিয়েছিল ৫ই আগস্ট, তা ছিল নজিরবিহীন। তাই, জেলা পর্যায়ে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়ে মেধা এবং ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে দল গঠনের প্রক্রিয়ায় মনোযোগ দেওয়া অত্যাবশ্যক।
পরিবারতন্ত্রের কারণে মেধাবী ও যোগ্য নেতৃত্ব অবহেলিত হচ্ছে, যা দলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যার সমাধানে মেধা ও ত্যাগীদের সঠিক মূল্যায়ন করে দল পুনর্গঠন করা অত্যন্ত জরুরি।
তৃতীয়ত: ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দকে অবজ্ঞা, অবহেলা এবং ক্ষেত্রবিশেষে অযোগ্য করার যে সংস্কৃতি অতীতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পৃষ্ঠপোষকতায় বিদ্যমান ছিল, তা বন্ধ করতে হবে। ভুলগুলো চিহ্নিত করে সংশোধনের প্রয়োজন।
১৯৮১ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন থেকেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একটি বৃহৎ অংশ, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা পর্যায়ের নেতা এবং বড় বড় কলেজের ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দলের ভেতরে একক নেত্রী এবং জাতীয় নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজেদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় উৎসর্গ করেছিলেন। তারা কখনোই এই চিন্তা নিয়ে কাজ করেননি যে দল ক্ষমতায় আসবে, বরং শুধুমাত্র নেত্রীর প্রতি ভালোবাসা এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকেই তারা কাজ করেছেন।
কিন্তু নেত্রী দলের সুদিনে তাদের মূল্যায়নের জন্য কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি, এবং ক্ষমতার রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতিতে এই সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ সবাই “চিটকে”পড়েছেন। অথচ তারা তাদের জীবনের সেরা সময়টি ব্যয় করেছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দলীয় এবং জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
১৯৮১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়কালে প্রায় এক হাজারের মতো সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ খুব সহজেই নেত্রী দিতে পারতেন। আজকে দেশ এবং দলের দুঃসময়ে লাখো কর্মী-সমর্থক থাকা সত্ত্বেও দলের হাল ধরার মতো নেতা খুঁজে পাওয়ার যে শূন্যতা, তা হয়তো থাকতো না।
সুযোগ তো নেত্রী তৈরি করেনইনি, পাশাপাশি গণমানুষের এই দলটিকে পরিবার, আমলা, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, সেলিব্রিটি, হাইব্রিড, দলছুট লোকদের হাতে তুলে দিয়েছেন।
সাবেক ছাত্র নেতৃবৃন্দের হাহাকার, আকুতি এবং অভিশাপ এই দলের উপর পড়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। তাদের অনেকেই পার্টি অফিসের সামনে ওবায়দুল কাদের সিন্ডিকেটের দ্বারা অপমানিত হওয়ার পর বলেছিলেন, প্রকৃতির বিচার একদিন হবেই, নেত্রী যেন তা দেখে যান। কিন্তু এত বড় কর্মফল হবে তা কল্পনাও করেননি। তারা সেই অভিশাপ ফিরিয়ে নিয়ে আবারও নেত্রীকে বাংলাদেশে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে চান। সংস্কার এবং দল পুনর্গঠন করে সেই ভুলের সংশোধন প্রয়োজন এবং সেই সুযোগ তৈরি করা অত্যাবশ্যক।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগসহ গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে সাংগঠনিক সংস্কার প্রয়োজন, ধাপে ধাপে বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনগুলোতেও। বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সারা দেশের নেতা-কর্মীদের কাছে বোঝা স্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে এভাবে সামাজিক মর্যাদাহীন, সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, হাইব্রিড এবং রাজনৈতিকভাবে কমিটমেন্টবিহীন লোকদের সমাবেশ ঘটানো সঠিক হয়নি। এটি দলের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়েছে। অধিকাংশ নেতার কোনো স্বীকৃত পেশা ছিল না, তারা ফুল-টাইম রাজনীতিবিদও ছিলেন না। তারা বিভিন্ন অর্থনৈতিক দন্ধায় ব্যস্ত ছিলেন।
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ভেতরে যে পঞ্চ পাণ্ডব এবং প্রোটোকল বাহিনী গড়ে উঠেছিল, তাদের ব্যবহারে সারা দেশের মানুষ ছিল অত্যন্ত বিরক্ত। টেকনাফের বদী, ফেনীর নিজাম হাজারী থেকে গাজীপুরের জাহাঙ্গীর—এই সব রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের পোষণ দিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে এই পঞ্চ পাণ্ডব। ক্ষমতার রাজনীতিতে তাদের সফলভাবে ব্যবহার করা গেলেও, নেত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রতি যে মানুষের ঘৃণা বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ ছিল আওয়ামী লীগ।
এছাড়াও, এই পঞ্চ পাণ্ডব মনোনয়ন বাণিজ্য এবং দলীয় পদ-পদবি বেচাকেনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে তারা ছিলেন দুর্ব্যবহারকারী এবং জাতীয়ভাবে ওবায়দুল কাদেরের পরিচিতি ছিল একজন ‘জোকার’ হিসেবে। তরুণ প্রজন্মের আওয়ামী লীগ বিমুখ হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ওবায়দুল কাদের। একজন ‘জোকার’ দলের নেতা হতে পারে, এটি তরুণ প্রজন্ম কখনোই মেনে নিতে পারেনি। তাই, আওয়ামী লীগকে তরুণ প্রজন্মকে আকর্ষণ করতে এবং নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে।
আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা দলীয় পদগুলো ব্যবহার করেছেন অর্থ কামানোর মেশিন হিসেবে।
কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে হাজার কোটি টাকা থেকে শত কোটি টাকার নিচে কাউকে পাওয়া যাবে বলে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিশ্বাস করেন না। এদের ব্যাপারে নেত্রীর কোনো মনিটরিং ছিল কি না জানা নেই। দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে পুনর্গঠনের, কারণ এরা কেউ দলের জন্য ভাবে না। তারা নিজেদের অর্থ-সম্পত্তি রক্ষায় ব্যস্ত, ঠিক একই চিত্র পাওয়া যাবে জেলা কমিটি, এমপি এবং মন্ত্রীদের বেলায়ও।
এরা সবাই ekhon attoগোপনে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে দলকে বাঁচাতে চায়, তাহলে লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী বেঁচে থাকার একটা পথ তৈরি করতে পারবে। আঠারো কোটি মানুষের দেশে একাশি সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি, তার মধ্যে শুধুমাত্র মাদারীপুর জেলা থেকেই নয় জন থেকে 10 রয়েছে। এছাড়া সহযোগী সংগঠনের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিও রয়েছে বেশ কয়েকজন এই জেলা থেকে। কোনো যুক্তিতেই এগুলোর গ্রহণযোগ্যতা দেওয়া যায় না। এভাবে দলের নেতৃত্ব শূন্য করা হয়েছে দিন দিন। পরিবর্তন এবং ভুল সংশোধন অবধারিত।
দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার দেওয়া বিবৃতি তৃণমূল বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বিরক্ত হচ্ছে। অবিলম্বে সিনিয়র কোনো গ্রহণযোগ্য নেতার মাধ্যমে তা দেওয়া উচিত।
নিচে এমন কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো যেখানে বিশাল গণআন্দোলনের মাধ্যমে কোনো দেশের সরকার বা রাজনৈতিক দল ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল, কিন্তু পরে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বা সংগঠন সংস্কার করে আবার ক্ষমতায় ফিরে এসেছে:
১.যুক্তরাজ্য (লেবার পার্টি) গণআন্দোলন: ১৯৭০-এর শেষ দিকে, যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টি অর্থনীতি পরিচালনা এবং “Winter of Discontent” (১৯৭৮-৭৯)-এর সময় ঘটে যাওয়া ব্যাপক ধর্মঘটের জন্য ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল। ক্ষমতাচ্যুতি: লেবার পার্টি ১৯৭৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে মার্গারেট থ্যাচারের কনজারভেটিভ পার্টির কাছে পরাজিত হয়, এবং প্রায় ১৮ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকে। সংস্কার ও পুনরুত্থান: ১৯৯০-এর দশকে টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে লেবার পার্টি নিজেদের “New Labour” হিসেবে পুনর্গঠিত করে। কেন্দ্রীয় নীতিমালার দিকে ঝুঁকে এবং মুক্তবাজার নীতিকে গ্রহণ করে তারা ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে বিশাল জয়লাভ করে এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে।
৩. চিলি (সোশ্যালিস্ট পার্টি এবং মিশেল বাচেলেট): গণআন্দোলন: ২০১১ সালে চিলিতে বিশাল ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জ জানায়। এই আন্দোলন সরকারের প্রতি অসন্তোষ বাড়ায় . ক্ষমতাচ্যুতি: যদিও অবিলম্বে ক্ষমতাচ্যুত হয়নি, তবে আন্দোলনটি রাজনৈতিক গতিশীলতা পরিবর্তনে সহায়ক ছিল| পুনরুত্থান: সোশ্যালিস্ট পার্টির মিশেল বাচেলেট, যিনি আগে ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তার রাজনৈতিক এজেন্ডাকে পুনর্গঠিত করে সামাজিক সংস্কার ও সমতার উপর জোর দেন। ২০১৪ সালে তিনি আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসেন।
৪. আর্জেন্টিনা (পেরোনিস্ট মুভমেন্ট): গণআন্দোলন: আর্জেন্টিনার পেরোনিস্ট পার্টি (Justicialist Party) অনেকবার গণআন্দোলনের কারণে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, বিশেষ করে ১৯৯০ এবং ২০০০-এর দশকের অর্থনৈতিক সংকটের সময়। ক্ষমতাচ্যুতি: ২০০১ সালের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর পেরোনিস্ট পার্টি তাদের জনপ্রিয়তা হারায় এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়ে। পুনরুত্থান: পেরোনিস্ট পার্টি তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডাকে সংস্কার করে সামাজিক কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের উপর জোর দেয়। ২০০৩ সালে নেস্তর কির্চনারের নেতৃত্বে তারা সফলভাবে ক্ষমতায় ফিরে আসে এবং পরবর্তীতে তার স্ত্রী ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ দে কির্চনারের নেতৃত্বে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের জায়গা ধরে রাখে।
এই উদাহরণগুলো প্রমাণ করে যে গণআন্দোলনের ফলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনগুলো তাদের নীতি, কৌশল এবং নেতৃত্বকে পুনর্গঠন করে এবং পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারলে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারে।
এখানে কিছু সাম্প্রতিক উদাহরণ দেওয়া হলো যেখানে কোনো দেশের সরকার গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল, কিন্তু রাজনৈতিক এজেন্ডা বা সংগঠন সংস্কারের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় ফিরে এসেছে:
1. শ্রীলঙ্কা: ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। এই সংকটের ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়, ঋণ খেলাপি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঘাটতি দেখা দেয়। এই বিক্ষোভের ফলে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং পদত্যাগ করেন। এরপর রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট হন এবং আইএমএফের সাথে আলোচনা শুরু করে এবং কিছু সংস্কারমুলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যদিও রাজাপাকসে পরিবার ক্ষমতা হারায়, তাদের রাজনৈতিক প্রভাব এখনও বিদ্যমান এবং তারা জনগণের আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্য তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা পুনর্গঠন করার চেষ্টা করছে।
2. ফিলিপাইন: ফিলিপাইনে মার্কোস পরিবারের ক্ষেত্রে একই ধরনের চক্র দেখা গেছে। ১৯৮৬ সালে পিপল পাওয়ার রেভলিউশনের মাধ্যমে ফার্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়র-এর একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটে। কিন্তু কয়েক দশক পর, তার ছেলে ফার্দিনান্দ “বংবং” মার্কোস জুনিয়র রাজনৈতিকভাবে পুনর্গঠিত হয়ে ২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয় ঐক্য এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে তার বাবার শাসনের কঠোরতার থেকে নিজেকে দূরে রাখেন এবং পরিবারের নামের উপর ভর করে সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন।
এই উদাহরণগুলো দেখায় যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা তাদের পরিবারগুলি গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা হারালেও, পরবর্তীতে নিজেদের রাজনৈতিক চিত্র পুনর্গঠন এবং কৌশলগত সংস্কারের মাধ্যমে পুনরায় জনগণের আস্থা অর্জন করে ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারে।
Posted ৯:১২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
bangladoinik.com | Belal Hossain
জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com