
| সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট | 425 বার পঠিত
বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেধাবী ছাত্র সাদিক মৃত্যুর আগে র্যাগিংয়ের নামে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররা তার রুমে ঢুকে জোরপূর্বক দাড়ি ও মাথার চুল কামিয়ে দেয়। গত ঈদের ছুটির আগেও সাদিকের রুমে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা উল্লেখ করে সোমবার কাপ্তাই থানায় মামলা দায়ের করেন নিহতের বড় ভাই মাহবুবুর রহমান।
মামলায় সাদিকুর রহমানকে পরিকল্পিতভাবে ছাত্রাবাসের দোতলার সানসেট থেকে নিচে ফেলে হত্যা করা হতে পারে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এজাহারে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের গাফলতি ও অব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করা হয়।
বাদী মাহবুব বলেন, পরিকল্পিতভাবে হোক আর ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় হোক- এটি একটি হত্যাকাণ্ড। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কোনো অবস্থাতেই এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।
নিহত সাদিকুর রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই থানাধীন বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের ৫৫তম ব্যাচের ৫ম সেমিস্টারের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ছাত্রাবাস থেকে গত ১৬ জুলাই বিকালে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তিন দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ১৯ জুলাই তার মৃত্যু হয়।
প্রতিষ্ঠানের জাহাঙ্গীর ছাত্রাবাসের পক্ষ থেকে সাদিকের মৃত্যুকে নিছক দুর্ঘটনা বলে দাবি করা হলেও স্বজনদের দাবি, সাদিককে দ্বিতীয়তলার সানসেট থেকে নিচে ফেলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সুরতহালে সাদিকের হাতে ধারালো অস্ত্রের রক্তাক্ত কাটা দাগ ছাড়াও মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে।
সাদিকুর রহমান ইতোপূর্বেও প্রতিষ্ঠানটির উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের দ্বারা র্যাগিংয়ের নামে একাধিকবার নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছিল বলে স্বজনদের অভিযোগ।
সাদিকের বড় ভাই মাহবুবুর রহমান বলেন, আমার ভাই নিয়মিত নামাজ পড়ত। সে কখনই দাড়ি কাটেনি। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে সে মাথার চুল কেটে এসেছে। ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফেরার পর সে র্যাগিংয়ের শিকার হয়। জোরপূর্বক তার দাড়ি ও মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হয়। গত ঈদের আগেও ছাত্রাবাসে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হন। সাদিক ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে এসব ঘটনা তার বড় ভাইকে অবহিত করে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিল।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে ফেরার সময় সাদিক ভয় ও আতঙ্কের সুরে বলেছিল- ‘এই তো আর মাত্র দেড় বছর, কোনোমতে পার করতে পারলেই বাঁচি।’
সাদিকের অপর সহোদর সাইদুর রহমান জানান, ঘটনার দিন ১৬ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টায় সাদিক ভিডিওকলে মায়ের সঙ্গে কথা বলে। তখন তার মাথার চুল এবড়োখেবড়োভাবে কাটা দেখা গেছে। ‘চুল এভাবে কেটেছো কেন, কী হইছে’, মা জিজ্ঞেস করতেই অপর প্রান্ত থেকে ফোন কেটে দেওয়া হয়। এর সোয়া ঘণ্টা পরই ক্যাম্পাস থেকে তাদের জানানো হয়, সাদিক ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে এবং তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। এ সংবাদ পেয়ে তারা ঢাকা থেকে চমেকে ছুটে যান। তিন দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর অবশেষে ১৯ জুলাই সকালে সাদিক মারা যায়।
এ বিষয়ে ফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. আবদুল মতিন হাওলাদার বলেন, সাদিক নিহতের ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষে কাপ্তাই থানায় একটি মামলা হয়েছে বলে শুনতে পাচ্ছি। মামলা হলে পুলিশ অবশ্যই তদন্ত করে দেখবে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কাপ্তাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নূরে আলম জানান, ওই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তার বড় ভাই মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার কাপ্তাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে।
Posted ১:২৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩
bangladoinik.com | faroque
জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com