সিডনি থেকে প্রকাশিত প্রশান্ত পারের বাংলা কাগজ প্রশান্তিকার বর্ষসেরা সাংবাদিক ও লেখক পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে। গত ২১ জুলাই শুক্রবার সিডনির লাকেম্বায় গ্রামীণ কনফারেন্স হলে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ. ই. মামুন প্রশান্তিকা জয়ী সন্ধ্যা অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার প্রদান করেন। এতে মোট ৪টি বিভাগে ৬ জন বর্ষসেরা লেখক ও সাংবাদিক বিজয়ী হন। এসময় অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সুধীজন, লেখক, সাংবাদিক, সংগঠক, রাজনীতিবীদ ও অসংখ্য পাঠক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে পুরস্কার পর্বটি পরিচালনা করেন প্রশান্তিকার সম্পাদক আতিকুর রহমান শুভ। তিনি দর্শক সারিতে বসা বিচারক মণ্ডলীর সদস্য অজয় দাশগুপ্ত, আবু রেজা আরেফিন, নোমান শামীম, শাখাওয়াৎ নয়ন, জন মার্টিন এবং সঞ্চালক সাকিনা আক্তারকে মঞ্চে ডেকে নেন। তাদের উপস্থিতিতে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন এবং তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সাংবাদিক জ. ই. মামুন।
বিজয়ী হলেন যারা : প্রতিবেদন বিভাগে বিজয়ী হন বাংলাদেশ থেকে সাংবাদিক দীপঙ্কর গৌতম। তাঁর প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিলো “অজয় রায়- ‘একে একে নিবিছে দেউটি’।” বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগে যৌথভাবে বর্ষসেরা বিজয়ী হন ফাহাদ আসমার (শিরোনাম- ভিনদেশে বিজয় দিবস, হাঙ্গরের গুহায় লাল সবুজের অভিযান) এবং শুভজিৎ ভৌমিক (শিরোনাম: জীবনের গল্প,গল্পের জীবনঃ প্রোগ্রাম রিভিউ)। মননশীল (শিল্প ও সাহিত্য) বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন অনীলা পারভীন (শিরোনাম- এক জীবনের গল্পঃ একজন ইয়াসমিন হক)। কলাম ও মতামত বিভাগে- যৌথভাবে বিজয়ী হন শিল্পী রহমান (শিরোনাম- আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে কারা?) এবং তানজিনা তাইসিন (শিরোনাম: ভয়্যারিস্টিক জাতি ও একজন মিথিলা)।
বিজয়ীদের প্রত্যেককে একটি সনদ, বই (তিনশত ডলার মূল্যের) এবং ফুলসহ ছোট্ট গাছ উপহার দেয়া হয়। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন পুরস্কারবিজয়ী ফাহাদ আসমার, অনীলা পারভীন এবং শুভজিৎ ভৌমিক। ব্রিসবেনবাসী লেখক ও কাউন্সেলর শিল্পী রহমানের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সংস্কৃতিকর্মী সাকিনা আক্তার, প্রশান্তিকার এডেলেইড প্রধান তানজিনা তাইসিনের পক্ষে তাসফিয়া এবং ঢাকা থেকে সাংবাদিক দীপঙ্কর গৌতমের পক্ষে অন্য আরেকজন পুরস্কার গ্রহণ করেন।
উপস্থিত বিজয়ী সাংবাদিকেরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় উদ্যোগটির প্রশংসা করেন। জ. ই. মামুনের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করায় তারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন বলে জানান। বিজয়ী সাংবাদিক ফাহাদ আসমার বলেন, “ আমার মত এক অলস লেখকের কাছ থেকে লেখা বের করার সকল কৃতিত্ব সম্পাদকের। তাকেসহ এই পুরস্কারের জন্য গঠিত প্যানেল বিচারকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।” অনীলা পারভীন বলেন, “ আজ এই পুরস্কার পেয়ে আমি খুব আনন্দিত হয়েছি যেমন আনন্দিত হয়েছিলাম এই ফিচারটি লেখার পরে প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার এবং ইয়াসমিন হক ম্যাডামের কাছ থেকে পাওয়া ইমেলে প্রশংসা দেখে।” শুভজিৎ ভৌমিক বলেন, জীবনে বহু অনুষ্ঠানে পারফর্ম করে কিংবা সঞ্চালনা করে প্রশংসিত হয়েছি। কিন্তু লিখে কোন কিছু অর্জন করা এই প্রথম। এটি আমার ঘরের দেয়ালে সারাজীবন শোভা পাবে।”
আমেরিকা সফরের উদ্দেশে যখন এয়ারপোর্টে ছিলেন ঠিক তখনি পুরস্কার বিজয়ের সংবাদটি পান ব্রিসবেনবাসী শিল্পী রহমান। তিনি বলেন, “ আমি খুব উচ্ছ্বসিত। বাইরে না গেলে অবশ্যই সিডনি এসে পুরস্কার গ্রহণ করতাম।” এডিলেইড থেকে তানজিনা তাইসিন এক বার্তায় বলেন, “ প্রশান্তিকার সম্পাদক একজন ভালো সংগঠকও বটে। তাকে সহ সকলকে আমার কৃতজ্ঞতা।” টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে বাংলাদেশ থেকে বিজয়ী সাংবাদিক দীপঙ্কর গৌতম বলেন, “ আমি খুউব আনন্দিত যে প্রশান্তিকার মত নিরপেক্ষ পত্রিকা থেকে এই শিরোপাটা পেলাম এবং এধরনের পুরস্কার জীবনে এটিই প্রথম।”
বিচারক মণ্ডলী: প্রশান্তিকার এ উদ্যোগের সাথে প্যানেল বিচারক হিসেবে ছিলেন অজয় দাশগুপ্ত (কলামিস্ট), আবু রেজা আরেফিন (সিনিয়র সাংবাদিক), জন মার্টিন (নাট্যজন, মনোবিজ্ঞানী), আসাদ শামস্ (চিকিৎসক, লেখক), আহমেদ আবিদ (নির্মাতা ও প্রযোজক, গবেষক), চৌধুরী আফতাবুল ইসলাম (সিনিয়র সাংবাদিক), আল নোমান শামীম (সম্পাদক, মুক্তমঞ্চ), শাখাওয়াৎ নয়ন (শিক্ষক, কথাসাহিত্যিক) এবং প্রশান্তিকার পরিচালনা পর্ষদ থেকে নাদেরা সুলতানা নদী (সহযোগী সম্পাদক), তুলি নূর (ব্রিসবেন প্রধান), নামিদ ফারহান (সাহিত্য সম্পাদক)। পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেন প্রশান্তিকা সম্পাদক আতিকুর রহমান শুভ। বিচারক মণ্ডলীর অধিকাংশ সদস্য প্রশান্তিকায় নিয়মিত লিখছেন। প্যানেলে থাকার কারণেই তাদের লেখা প্রতিযোগিতায় আনা হয়নি।
উল্লেখ্য, প্রশান্তিকায় ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত প্রায় এক হাজার আর্টিকেল থেকে শর্টলিস্টেড করে প্রতিটা বিভাগে তিনটি আর্টিকেলকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। তারপর প্রশান্তিকার পাঠকেদের মাঝে সেরা আর্টিকেলের জন্য ভোট আহ্বান করা হয়। তাদের ভোট এবং বিচারক মণ্ডলীর সদস্যদের যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমেই বিজয়ী নির্ধারিত হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করেন প্রশান্তিকা সম্পাদক আতিকুর রহমান শুভ। বিজয়ীদের জন্য নান্দনিক সনদপত্রটির ডিজাইন করেন হৃদয় চৌধুরী।
প্রশান্ত পারের বাঙলা কাগজ- প্রশান্তিকা প্রকাশিত হচ্ছে ২০১৬ সাল থেকে। প্রথমে এটি প্রিন্টেড বা ছাপা পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও চারটি প্রকাশনী শেষে অনলাইনে (www.proshantika.com) নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত মাল্টিকালচারাল এন্ড ইনডিজিনিয়াস মিডিয়া এওয়ার্ডে ( MIMA Awards) প্রশান্তিকা সেরা ডিজিটাল মিডিয়ার পুরস্কার লাভ করে। বাংলাদেশ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি এবং স্বনামধন্য লেখক ও সাংবাদিকেরা প্রশান্তিকায় কন্ট্রিবিউট করছেন। প্রশান্তিকা বইঘর এই কাগজ পরিবারের একটি প্রতিষ্ঠান।