
আনোয়ার হোসেন | শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট | 72 বার পঠিত
তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার নদীর ৯৮৬টি চরে ৩ লাখ ৫০ হাজার পরিবারের প্রায় ১৭ লাখ মানুষ বসবাস করছে। তবে, চরাঞ্চলের মানুষ কৃষি ও গবাদিপশু পালনে সাফল্য পেলেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তির সেবা থেকে বঞ্চিত।তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, লালমনিরহাট জেলার ৪টি উপজেলায় ৩৮টি চরে ১৬ হাজার ৬০৯টি পরিবার, নীলফামারী জেলার ২টি উপজেলায় ২০টি চরে ৮ হাজার ৯৪টি পরিবার, রংপুর জেলার ৩টি উপজেলায় ৫১টি চরে ২২ হাজার ১৫টি পরিবার, কুড়িগ্রাম জেলার ৭টি উপজেলায় ২৭১টি চরে ১ লাখ ২ হাজার ৫২১টি পরিবার, গাইবান্ধা জেলার ৪টি উপজেলায় ১৩৪টি চরে ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৩২টি পরিবার, বগুড়ার জেলার ২টি উপজেলায় ৪৯টি চরে ১৬ হাজার ৭৭৬টি পরিবার, সিরাজগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলায় ১৯৩টি চরে ৫৮ হাজার ৭৯৭টি পরিবার, জামালপুর জেলার ৪টি উপজেলার ১১৩টি চরে ৪১ হাজার ১২৩টি পরিবার এবং টাঙ্গাইল জেলার ৪টি উপজেলায় ৯৪টি চরে ২২ হাজার ৭৬০টি পরিবার বসবাস করছে।
গত দুই দশকে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে চরাঞ্চলের কৃষি চাষাবাদ ও গবাদিপশু প্রাণী পালনে দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটলেও দারিদ্রতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না এসব পরিবার। বিশেষ করে, শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা, তথ্য ও প্রযুক্তি সেবা উন্নয়ন ও কারিগরি শিক্ষায় এখনও পিছিয়ে চরাঞ্চলের মানুষ।
এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থায় কোন পরিবর্তন ঘটেনি। এতে করে, মেইনল্যান্ডের সঙ্গে বর্ষাকালে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে ও ঘোড়ার গাড়ির বিকল্প কোনো পথ সৃষ্টি না হওয়ায় যাতায়াত দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। গাইবান্ধা সাঘাটা উপজেলার কুমারপাড়া চরের জামাত উদ্দিন মন্ডল জানান, জন্মের পর থেকে নৌকায় আর পায়ে হেটে ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হাটবাজার ও অন্যান্য কাজে মেইনল্যান্ডে যেতে হচ্ছে।
নদীভাঙনের অজুহাতে চরাঞ্চলে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন কোনো কাজ চোখে দেখিনি। তিনি আরও জানান, নদীভাঙনে কবলে পড়লেও চরাঞ্চলগুলো ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেই সরকারের। পতিলবাড়ি চরের বাবুল প্রামানিক জানান, চরের কোন হাইস্কুল না থাকায় বেশির শিশুর পড়ালেখা বন্ধ হয় প্রাথমিকেই।
এজন্য সন্তানদের বাল্যবিয়ে দিতে হচ্ছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া গ্রামেন রাজা মিয়া জানান, চরের জীবন দেখার জন্য কেউ নেই। নেই যোগাযোগ ব্যবস্থা, কেনাকাটার জন্য হাটবাজার, চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ না থাকায় যুগের পর যুগ ধরে একই অবস্থা। সমস্যার বোঝা নিয়েই চলছে চরের মানুষে জীবনযাত্রা।
ফুলছড়ি উপজেলার গুপ্তমনি চরের নুরুল ইসলাম বলেন, চরের এখন গম, মরিচ, বাদাম, আলু, পিঁয়াজসহ নানা ধরনের শস্য উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিটি বাড়িতে গরু, ছাগল, ভেড়া চাষাবাদ হচ্ছে। এজন্য খাদ্য সংকট কমেছে কিন্তু চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনোদন ও তথ্য প্রযুক্তি তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি বলে তিনি জানান।
কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুরের আব্দুল কুদ্দুস বিশ্বাস জানান, চরের মানুষের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও সমন্বয় না থাকা এবং এজন্য পৃথক কোনো পরিকল্পনা না থাকায় জীবনমানের উন্নয়নে কোন ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে না। উন্নয়ন গবেষক ও গণউন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী এম, আবদুস সালাম জানান, চরাঞ্চলের মানুষনের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়ন হলেও ঘটলেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী ও কন্যা শিশু সুরক্ষা ও বাজার ব্যবস্থায় দৃশ্যত কোন উন্নয়ন ঘটেনি।
এজন্য তিনি সঠিক পরিকল্পনার গ্রহণের মাধ্যমে চরের মানুষের উপযোগী প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানান। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত জানান, চরের মানুষের উন্নয়নে সরকারি গবেষণামূলক সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
Posted ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
bangladoinik.com | Belal Hossain
জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com