
রামগঞ্জ লক্ষ্মীপুর: | বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট | 31 বার পঠিত
আপনারা ইতোমধ্যেই জানেন যে, লক্ষীপুর ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর অন্যতম বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জনাব নাজিম উদ্দিন আহমেদ গত ১০ মার্চ ২০২৫ তারিখে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ছিলেন রামগঞ্জের একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং অবিসংবাদিত নেতা। বিএনপি’র তৃনমূল থেকে শীর্ষপর্যায় পর্যন্ত তাঁর গ্রহনযোগ্যতা ছিল অনন্য উচ্চতায়।
আমার সাথে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়। উনার সাথে আমার প্রথম সরাসরি সাক্ষাত হয় হোটেল ওয়েস্টিনে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে সন্ধ্যা ৭.৪৫টায়। আমি ভীষন সৌভাগ্যবান যে, সেদিন উনাকে আমার পক্ষ থেকে এক কাপ কফি অফার করতে পেরেছিলাম। উনি ক্যাপাচিনো নিলেন চিনি সহ। কফিতে চুমুক দিতে দিতে উনি আমার দিকে কেমন যেন এক গভীর মায়ায় তাকাচ্ছিলেন এবং আমার চোখে কিছু একটা পড়ার চেষ্ঠা করছিলেন। উনার রহস্যভরা চাহনির মধ্যে যেন অনেক গল্প লুকায়িত ছিলো। উনি আমার পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানতে চাইলেন এবং এক পর্যায়ে বললেন যে, উনি আমার চাচা জনাব মোক্তার আহমেদ এর সরাসরি ছাত্র ছিলেন। উনি যে স্কুলে পড়তেন, আমার চাচা সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। উনার সাথে আমার প্রথম স্বাক্ষাতটা খুবই চমৎকার ছিলো এবং উনাকে আমার চেয়েও তরুন মনে হচ্ছিলো। উনার বয়সটাকে মনে হচ্ছিলো শুধুই যেন একটা সংখ্যা।
উনি আমাকে বুঝালেন, কিভাবে উনার ভক্তদের খেয়াল রাখেন, কিভাবে তাদের নিয়ে ভাবেন এবং কিভাবে সমাজ নিয়ে ভাবেন। উনার সাথে কথা বলেই বুঝতে পারছিলাম উনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান, নেতাকর্মীদের প্রতি দায়িত্বশীল এবং সমাজের জন্য কাজ করতে ভীষন মরিয়া একজন বড় হৃদয়ের মানুষ। উনি তাঁর সমাজের মানুষ এবং নেতাকর্মীদের পিতৃত্বের চোখ দিয়ে দেখতেন। উনি সেদিন পিতৃস্নেহে আমার হাতটা ধরে শুধু বললেন, “তোমার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ যেন তোমাকে সফলকাম করেন।” আমি সেদিন এভাবে হাত ধরার গভীরতা অনুভব করতে পারিনি। উনি আমার হাতটা কিছুক্ষন ধরে থেকে যখন স্থান ত্যাগ করছিলেন, তখন আমি উনার চলে যাওয়া দেখছিলাম। কিন্তু, উনি পেছনে ফিরে তাকাননি।
পরের দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। উনি উনার কর্মীবৃন্দকে ডাকলেন এবং আমার সম্পর্কে কিছু বললেন। আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলাম এবং উনার প্রত্যাশা শুনে অন্য রকম চাপ অনুভব করতে লাগলাম। সেদিন থেকে প্রায় প্রতিদিন উনার সাথে আমার কথা হচ্ছিলো। প্রতিদিনই উনি আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে বলতেন এবং বেশি বেশি মানুষের সাথে মিশতে বলতেন। উনার মধ্যে একটা অন্যরকম তাড়া লক্ষ্য করছিলাম। কিন্তু, আমি কোনভাবেই বুঝতে পারিনি যে, উনি উনার পরবর্তী গন্তব্যে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন।
উনার সাথে আমার স্বাক্ষাত হওয়ার কথা ছিলো বনানীর হোটেল শেরাটনে ১০ মার্চ, ২০২৫ তারিখে রাত নয়টায়। আমি যথাসময়ে সেখানে উপস্থিত হই। উনি আশার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে উনার বাসার পার্কিংয়ে যান। কিন্তু, হঠাৎ শরীর খারাপ করায় উনি বাসায় ফিরে যান। উনি অসুস্থ শুনে আমি দ্রুত উনার বাসায় যেতে উদ্যত হই। কিন্তু, উনার বাসায় উনি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে এই মুহূর্তে খাতির যত্ন করতে পারবেন না, এমনটা ভেবে একটু অপ্রস্তুত অনুভব করলেন। আমি উনার বাসায় যেতে চাইলে উনি আমাকে বারন করেন। কিছুক্ষনের মধ্যে উনার সহকর্মীকে দিয়ে মেসেজ পাঠান “যত্ন নিও”। আমি আমার বাসায় চলে যাই এবং ১ ঘন্টা পর উনার মৃত্যুর সংবাদ পাই। আল্লাহ উনাকে বেহেশত নসীব করুক।
উনার সাথে অল্প কয়দিনের কাজের অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে, উনি সবসময় অন্তর্ভূক্তিমূলক রাজনৈতিক কাজের বিষয়ে গুরুত্ব দিতেন। উনি তৃনমূল নেতাদের মাঝে বিভাজন এবং বিভেদ নিয়ে সবসময় ভীষন অস্বস্তি অনুভব করতেন। উনার শেষ ইচ্ছা ছিলো সকলকে ঐক্যবদ্ধ করা।
দেশ গঠনে সর্বোচ্চ ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। যারা বিএনপিকে হৃদয়ে ধারন করেন, তাদের বিভাজনের কোন সুযোগ নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই। এখন সময় এসেছে ২টি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার।
১. আপনি কি ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির পক্ষে নাকি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মূল্যবোধের বিপক্ষে?
২. আপনি কি আমাদের পক্ষে নাকি দেশ গড়ার বিপক্ষে? চলুন এগিয়ে যাই “একসাথে”।
Posted ৪:০৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
bangladoinik.com | Belal Hossain
জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com