বৃহস্পতিবার ১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

গাইবান্ধায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গরুর হাল

আনোয়ার হোসেন,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ   |   বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   105 বার পঠিত

গাইবান্ধায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গরুর হাল

আমায় ডেকো না আর, আমি রবো তোমাদের মাঝে এই বাংলায়, শৈশবে তুমি কৈশোরে আমি প্রকৃতির সাথে করি মাখামাখি, ভালো বাসার গন্ডির মধ্যে গ্রাম বাংলার হাত ধরি!! বলছিলাম গ্রামবাংলার ঐতিহ্য গরু দিয়ে হাল চাষের কথা।

অতীতে প্রতিনিয়ত জমিতে হালচাষের জন্য গাঁয়ের মেঠো পথে দেখা যেত গরু-মহিষের হাল। কিন্ত তা আজ হারিয়েই যাচ্ছে। পশু দিয়ে হালচাষের পরিবর্তে এসেছে আধুনিক নানা প্রযুক্তি। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে জমিতে গরু-মহিষ দিয়ে লাঙল কিংবা মই টানার দৃশ্য যেন অপরিচিত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে সেই পদ্ধতি। প্রযুক্তির কল্যাণে পিষ্ট লাঙল-গরু-মহিষের ঐতিহ্যবাহী হালচাষ! অথচ ১ যুগ আগেও কৃষকেরা ভোরবেলা মাঠে গিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাল চাষ করতেন। গরু-মহিষ দিয়ে লাঙল ও মই টানার বিকল্পই ছিল না। বর্তমানে সেই অবস্থা আর নেই। চাষাবাদ আধুনিক হয়ে যাওয়ায় কম সময়ে লাভ বেশি তাই মাঠ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষকদের বাব-দাদা আমলের ঐতিহ্যটি। কৃষির উন্নয়নে তাল মেলাতে না পেরে সেই হালচাষ এখন বিলুপ্তির পথে। কিছুদিন পর হয়তো বা ঐতিহ্য হয়ে জাদুঘরে ঠাঁই নেবে হাল চাষের সনাতনী এই যন্ত্র।

এক সময় গরু ও লাঙল দিয়ে জমি চাষ আর মই দেয়ার দৃশ্য সবার নজর কাড়ত। মাঠে তাকালেই নজর পড়তো শত শত কৃষক কাঠের লাঙল হাতল আর জোয়াল গরুর কাঁধে বেঁধে জমি চাষ করছেন। সে সময় মামুন হাল বা গাঁতা হালের প্রচলনও ছিল। পাড়ার ১৫/২০ টি হাল এক সঙ্গে মিলে বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিদিন একজনের করে জমি চাষ করে নিতেন একে বলা হতো গাঁতা হাল।
আবার পারিশ্রমিক ছাড়াই একজন কৃষক এক দিনে তার সব জমি চাষ করে রাতে এই হালচাষী বা হালুয়াদের জন্য খাবারের আয়োজন করতো একে বলতো মামুন হাল। এই মামুন হাল বা গাঁতা হালের সময় হালচাষী বা হালুয়াট মনে আনন্দই ছিল আলাদা। এই হালচাষী বা হালুয়ারা যখন জমি চাষ করতো আর তিস্তাপাড়ের ভাওয়াইয়া গান গাইতো এমন দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দিত। বাড়ির পাশে ব্যাতের আঁড়া, হাল ধরেছে ছোট্ট দেওড়ারে, এতো বেলা হোল ভাবিধন পন্তা নাই কি ঘরে রে…..। “রোদের মধ্যে হাল বাও তুমি রোদে পুড়ে তোমার গাও, আমার বাড়ি আইসো বন্ধু ঠান্ডা পানি খাইয়া যাও”। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সাথে সাথে আধুনিকতার স্পর্শে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারের ফলে কৃষকদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে কৃষি মাঠে। ফলে কৃষি মাঠে কৃষকের সেই ভাওয়াইয়া, জারি গান আর লাঙ্গল ও গরু দিয়ে জমি চাষ করতে দেখা যায় না।

গরু-মহিষ ও লাঙলের সঙ্গে কৃষকের গভীর মিতালির দৃশ্য এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তণে বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় গরু ও লাঙলের স্থান দখল করেছে যান্ত্রিক ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি। এখন কৃষক সুবিধামতো যেকোনো সময় জমি চাষ এবং মই দিয়ে ফসল আবাদ করতে পারছেন। আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে জমি চাষে পরিশ্রম ও সময় লাগছে কম।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুরের প্রবীণ কৃষক কলিম উদ্দিন বলেন, একসময় প্রতিটি গ্রামের বাড়িতে ছিল গরু-মহিষের লালন-পালন। গরু-মহিষ ছিল পরিবারের সদস্যের মতোই। তা দিয়ে বিঘার পর বিঘা জমি চাষ করতাম। শতবর্ষী কৃষক আব্দুল বারী শেখ বলেন, যাদের গরু-মহিষ কিংবা হাল ছিল না, তাদেরকে জমি চাষের জন্য ‘বর্গা হাল’ দেয়া হতো। অনেকে হাল চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাদের স্থানীয় ভাষায় বলা হতো হাল চাষী বা হালুয়া। হালুয়ারা জমি চাষ করে দিতেন টাকার বিনিময়ে। চাষের মৌসুমে তাদের বাড়তি আয়ও হতো।

বেড়াডাঙ্গা গ্রামের বড় কৃষক কফিল উদ্দিন আফসোস করে বলেন, এখন আর কেউ গরু-মহিষ দিয়ে হাল চাষই করে না। একই গ্রামের
মোস্তফা শেখ বলেন, বাপ-দাদার আমলের ঐতিহ্য গ্রামাঞ্চল থেকে গরু-মহিষের হাল বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিভাগ বলেন, গরু-মহিষের হাল চাষে অনেক সময় ব্যয় হতো। বর্তমানে হাল চাষে আধুনিক ট্রাক্টরের আবিষ্কার হওয়ায় অল্প সময়ে কৃষকরা অনেক জমি চাষ করতে পারছেন। ফলে পুরোনো পদ্ধতিতে গরু-মহিষে হাল চাষ তেমন একটা চোখে পড়ে না। আগের সেই হাল চাষ এখন যেন শুধুই ঐতিহ্য।

Facebook Comments Box

Posted ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

bangladoinik.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com

এ বিভাগের আরও খবর

https://prothomalo.com
https://prothomalo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক
ফখরুল ইসলাম
সহসম্পাদক
মো: মাজহারুল ইসলাম
Address

2nd floor, Opposite building of Muradnagar Thana gate, Muradnagar-3540, Bangladesh

01941702035, 01917142520

bangladoinik@gmail.com

জে এস ফুজিয়ামা ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্রাতৃপ্রতিম নিউজ - newss24.com